জন্ম তারিখ: ১০ মার্চ, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : রাবেয়া ক্লিনিক
“আমাদের ছেলেটাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা কার কাছে বিচার চাবো জানিনা। কেউ আমাদের কথা শুনছে না। পুলিশ মামলা নিচ্ছে না, বলছে তাদের মেশিন সব পুড়ে গেছে। বগুড়ার মাটিতে আমরা এর বিচার চাই” - শহীদের প্রতিবেশী চাচা মিলন শহীদ সিয়াম শুভ ২০০৮ সালের ১০ মার্চ বগুড়ার চক সুত্রাপুরের হাড্ডিপট্টি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: আশিক শেখ (৪০) বাস ড্রাইভার এবং মাতা মোসা: শাপলা বেগম (২৮) গৃহিণী। শহীদ শুভ পেশায় ছিলেন ভাঙ্গাড়ি ব্যবসায়ী। ভ্যানে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র কুড়াতেন ও বিক্রি করতেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ১৯ জুলাই সকাল থেকেই বগুড়া সদরের বিভিন্ন জায়গায় চলছিল বিক্ষোভ মিছিল। দুপুর একটার দিকে বাসা থেকে বের হন শহীদ সিয়াম শুভ। বাবা-মা নিষেধ করলে বলেন, "দেশ স্বাধীন করতে যাচ্ছি।" মিছিলটি সেউজগাড়ী, কালিয়া বাজারের আমতলী মোড়ে অবস্থান করছিল। পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছিল। বিকাল ৪ টার দিকে অসংখ্য রাবার বুলেট সিয়ামের মাথায়,বুকে, চোখে এবং মুখে বিদ্ধ হয়। তার চোখ নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। তারা আরও জানান, পরক্ষণে আরেকটা গুলি সরাসরি তার মাথায় বিদ্ধ হয়। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক আন্দোলনকারীরা তাঁকে রাবেয়া ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হয় রাবেয়া ক্লিনিকেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। পুলিশ সেদিন পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। পরের দিন সকাল থেকেই পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করতে থাকেন। পুলিশ সেদিনও গড়িমসি করতে থাকে। অবশেষে বিকাল ৩:৩০ মিনিটে তার লাশ হস্তান্তর করে। জানাযাকে আন্দোলন মনে করে সেখানেও পুলিশ গুলি করেছিল। পরে অবশ্য লাশ দেখে তারা চলে যায়। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদের মা শাপলা বেগম বলেন, "পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যা করে পাবলিকের নাম দিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের ৪০ দিন পার হয়ে যাচ্ছে আমি এখনো বিচার পাইনি।" তিনি শহীদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, "একদিন তার বাবা আমার কাছে ৫০০০ টাকা জমা দিয়েছিল। আমি টাকাটি হারিয়ে ফেলি। একটি জরুরী কাজে ওর বাবার তা প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন তো আমার কাছে কোনো টাকা নেই। কোথা থেকে ব্যবস্থা করব। তখন সিয়াম আমার কান্না করা দেখে দোকানে ১০ টাকা, ২০ টাকা করে জমানো পাঁচ হাজার টাকা আমার হাতে তুলে দেয়।" শহীদের বাবা মো: আশিক শেখ বলেন, আমি মিছিলে যেতে নিষেধ করলে সে আমাকে বলে, "দেশ স্বাধীন করে আসি।" শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ সিয়াম শুভ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজস্ব ভ্যানে করে পরিত্যক্ত জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করতেন। শহীদের বাবা একজন বাস ড্রাইভার। তিনি পরিবারসহ চক সুত্রাপুর গ্রামের হাড্ডিপট্টি রেলস্টেশনের বস্তিতে বসবাস করেন। তারা মোট পাঁচ ভাই বোন। তার ভাই শাওন (১৪) কিছুই করে না। ছোট বোন ছোয়া (১২) ও ছড়া(৬) স্থানীয় যুবিনী স্কুলে পড়াশোনা করে। শিশির নামে ছোট আরো একটি ভাই রয়েছে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : সিয়াম শুভ পিতার নাম : মো: আশিক শেখ (৪০) মাতার নাম : মোসা: শাপলা বেগম (২৮) স্ত্রীর নাম : শিমু খাতুন (৩৮) জন্ম তারিখ : ১০ মার্চ ২০০৮ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চক সুত্রাপুর, ইউনিয়ন: বগুড়া সদর, থানা: বগুড়া সদর, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : হাড্ডিপট্টি রেল কলোনি, বগুড়া সদর, বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : সেউজগাড়ী, কালিয়া বাজার, আমতলী মোড়,বগুড়া আহত হওয়ার সময়কাল: ১৯ জুলাই, ২০২৪, বিকাল চারটা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ১৯ জুলাই, ২০২৪, সময়: বিকাল ৪:১৫ মিনিট, রাবেয়া ক্লিনিক যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি কবরস্থান : নামাজগড় আঞ্জুমী কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের বাবার মুদি দোকানটি চালু করার ব্যবস্থা করা ২. ছোট্ট দুটি বোনের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা এবং বেকার ভাইটির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে