জন্ম তারিখ: ১ এপ্রিল, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা :গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান :জয়দেবপুর হাসপাতাল।
মিনহাজ হোসেনের জন্ম বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর জেলা জয়পুরহাটে। জয়পুরহাট পরিচ্ছন্ন শহর রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। এখানের-ই এক সুন্দর গ্রাম রামশালার মো: বক্কর সরদার ও মোসা: মেরীনা বিবির কোলজুড়ে, চাঁদের মায়াবী হাসির খুশি নিয়ে ০১.০৪.২০০৮ জন্মগ্রহণ করেছিল মো: মিনহাজ হোসেন। এ গ্রামেই মিনহাজের বেড়ে ওঠা। পড়াশোনার হাতেখড়ি নিয়েছিলেন পাঠশালায়। মাদ্রাসায় পড়তো সে, করোনাকালীন সময়ে মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিনহাজ ঢাকায় চলে যায়। একটি এমব্রয়ডারির প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখে। পরবর্তীতে মিনহাজ একটি গার্মেন্টসে কর্মী হিসেবে যোগ দেয়। নিউ কমার্স গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে সে সহকারী অপারেটর হিসেবে চাকুরী করতো। মা ও বাবার ভেতরে চলছে দাম্পত্য কলহ। মালয়েশিয়ান প্রবাসী পিতা মো: বক্কর সরদারের সাথে মা মেরীনা বিবির আছে দূরত্ব। মা মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। মিনহাজ দেখাশোনা করতো মায়ের। মা এখন বাবার বাড়িতে তার বড় ভাইয়ের তত্ত্বাবধানে আছেন। শহীদ হওয়ার ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। সারাদেশে রাস্তায় নেমে পড়েছে ছাত্র-জনতা। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ভেবেছিল, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে এ গণআন্দোলনকে রুখে দিতে পারবে। সারাদেশে তখন আন্দোলন ভিন্ন এক রূপ নেয়, যে যার মত নিজ জায়গাতেই আন্দোলনে নেমে পড়ে সবাই। নিজেকে আটকে রাখতে পারেনি কিশোর মিনহাজ। বন্ধুদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের সাথে আন্দোলনে গিয়েছিলো। তখন সে গাজীপুরের বড়বাড়ীর একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। বেলা ১১টার দিকে বন্ধুরা ফোন দিয়ে তাকে নিচে নামতে বলে। সাথে সাথেই সাড়া দেয় সে। বড়বড়ীতে শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীদের সে মিছিলটি যখন দুপুর ১২টার দিকে জয়বাংলা রোডে পৌঁছায়, পুলিশ শিক্ষার্থীদের দিকে মুহুর্মুহু গুলি চালাতে থাকে। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয় মিনহাজ। তার সাথে সেখানে গুলিবিদ্ধ হয় আরো ৪জন। তাকে দ্রুত জয়দেবপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, স্বৈরাচারমুক্ত সমাজের জন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় জীবনটি উৎসর্গ করে মিনহাজ। শোকসন্তপ্ত পরিবার বাবা মালেয়েশিয়ান প্রবাসী। মিনহাজ যখন শহীদ হয়, বাবা তখন দূর প্রবাসে। দেশে ফিরে আসলেও সন্তানের মুখটি শেষবারের মতন দেখতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে বুকের কলিজার টুকরো সন্তানকে হারিয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন জননী। মিনহাজ মাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিল চিকিৎসা করাতে, কিন্তু হায়াতের সময় শেষ— আল্লাহ মায়ের সুস্থতা না দেখিয়েই তাকে শহীদের জন্য কবুল করলেন। স্বৈরাচার হাসিনার রক্তপিপাসা মিনহাজের মত প্রাণবন্ত জীবনকে কেড়ে নিলো। একটি তরতাজা ফুল চলে গেলো স্মৃতির পাতায়। তার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বলেন— ‘শহীদ মিনহাজ ৩ বছর বয়স থেকেই আমার সাথে থাকত। তাকে আমি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। করোনার সময় মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় সে ঢাকায় এমব্রয়ডারির কাজ শিখেছিল। সে খুব ভালো ছেলে ছিল। আমি যদি তাকে কখনো বকাঝকা করতাম সে রাগ করত না, সবসময় সম্মান করত। সবসময় হাসিমুখে থাকত। তার সেই হাসিমুখটি এখন আমাদের কাছে শুধুই স্মৃতি।’ শহীদ মিনহাজ হোসেনের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: মিনহাজ হোসেন জন্ম তারিখ : ০১.০৪.২০০৮ শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ২০ জুলাই ২০২৪, দুপুর ১২টা আহত হওয়ার স্থান : গাজীপুর বড়বাড়ী শহীদ হওয়ার স্থান : জয়দেবপুর হাসপাতাল আঘাতের ধরণ : বুকে গুলিবিদ্ধ হত্যাকারী : পুলিশ সমাধিস্থল : বাড়ির পাশেই পেশা : গার্মেন্টস কর্মী পিতা : মো: বক্কর সরদার মাতা : মোছা: মেরীনা বিবি স্থায়ী ঠিকানা : রামশালা, জাফরপুর, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগীতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারকে নিয়মিত ভাতা প্রদান করা ২. শহীদের মায়ের চিকিৎসা সহয়তা করা