Image of মো: ফজল মাহাদী

নাম: মো: ফজল মাহাদী

জন্ম তারিখ: ১২ ডিসেম্বর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : আগুন নেভাতে গিয়ে আটকা পড়ে। বাঁচতে গিয়ে পাশের ছাদে লাফ দিলে- পড়ে গিয়ে মৃত্যু, হোটেল জাবের, চিত্রার মোড়, যশোর

শহীদের জীবনী

শহীদ ফজল মাহাদী (চয়ন), ১২ ডিসেম্বর ২০০৫ সালে যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যশোর সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং মেধাবী ও উদ্যমী হিসেবে সকলের প্রিয় হয়ে ওঠেন। তার স্থায়ী ঠিকানা ছিল চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোর। ফজলের বাবা মফিজুর রহমান। মা রওশনারা রুনা একজন গৃহিণী। বাবা মফিজুর রহমানের সাথে বিচ্ছেদোত্তর তার মা এস আই জামাল উদ্দীনের সাথে দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই সংসারে জায়ান (২) নামে তার একটি বৈপিত্রেয় ছোট ভাই রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, যশোরের চিত্রার মোড়ে হোটেল জাবেরের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফজল আগুন নেভাতে গিয়ে আটকা পড়েন। নিজেকে বাঁচানোর প্রচেষ্টায় পাশের ছাদে লাফ দেন, কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি। সন্ধ্যা ৬টায় তার জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। ফজল মাহাদী চয়নের নিঃস্বার্থ সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের স্মৃতি তার পরিবার ও প্রিয়জনদের মনে চিরকাল অমলিন থাকবে। যশোরের রাজবাড়ী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে এই তরুণ শহীদ। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ শহীদ ফজল মাহাদী (চয়ন) ছিলেন এক অনন্য যোদ্ধা, যিনি মানবতার জন্য আত্মত্যাগের এক মহান উদাহরণ স্থাপন করেছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার পতনের দিন, সাধারণ মানুষ খুশিতে আত্মহারা হয়ে বিজয় মিছিল বের করেন। দিনটি ছিল সকলের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার সূচনা। কেননা, পতনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী হাসিনার দীর্ঘদিনের জুলুমের অবসান ঘটেছে। ফজল, তাঁর দুই বন্ধু রিয়াদ ও শান্তকে নিয়ে বিজয় মিছিলে অংশ নিতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। আনন্দের আবহে তারা যশোর শহরের চিত্রার মোড়ের দিকে অগ্রসর হন। তখনই তারা জানতে পারেন জাবের হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা স্বৈরাচারের পৃষ্ঠপোষক যশোরের চিত্রার মোড়ের হোটেল জাবের-এ আগুন দেয়। হোটেলের ভিতরে অনেক মানুষ আটকা পড়েছে এমন আশঙ্কায়, ফজল ও তার বন্ধুরা স্থানীয়দের সাথে উদ্ধার কাজে যোগ দেন। তাদের মনে সাহস ও মানবিকতার উদ্দীপনা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ফজল আগুন নেভাতে ও আটকে পরাদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই আটকা পড়েন শহীদ ফজল মাহাদী। অগ্নিদুর্যোগের তীব্রতা বেড়ে গেলে ফজল সাহসী হয়ে হোটেলের ৮ম তলা থেকে পার্শ্ববর্তী একটি বিল্ডিংয়ের ছাদে লাফ দেয়। কিন্তু সেই লাফটিই তার শেষ বিদায়ের জন্য যথেষ্ট হবে কে জানত। তিনি পিছলে পড়ে যান এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর ডান হাত ও ডান পা ভেঙে মৃত্যু ঘটে। ফজল মাহাদীর মৃত্যু তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের জন্য একটি গভীর শোকের বিষয়। তিনি ছিলেন সেই যুবক, যিনি সব ধরনের মানবিক কাজে সবার আগে ছুটে যেতেন। তাঁর সাহসিকতা এবং মানবিকতা চিরকাল মানুষের হৃদয়ে অমলিন থাকবে। পাশের বাড়ির বন্ধু রিয়াদ শেখ ও শান্তসহ তিন বন্ধুকে একসাথে গোসল ও জানাযার পর চাঁচড়া রাজবাড়ী কবরস্থানে দাফন করা হয়। ফজল মাহাদী চয়ন আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এক মহান শহীদ হিসেবে, যিনি মানবতার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর বক্তব্য/অনুভূতি শহীদের মা বললেন, এই বছর(২০২৪) ১২ ডিসেম্বর ১৯ বছর পূর্ণ হতো। ১৯ বছর ধরে মা হিসেবে কত কথা, কত স্মৃতি জমা হয়েছে! সে লম্বা হয়েছিল, কিন্তু ভারী বুদ্ধি হয়নি। শিশুসুলভ স্বভাবটাই রয়ে গিয়েছিল। কত স্মৃতি বলব! আপনারা যদি ওকে নিয়ে কথা বলতে আসেন, কোনো নেগেটিভ কিছুই শুনবেন না। এলাকার মানুষ ওকে খুব ভালো জানতো। কেউ তাকে খারাপ বলবে না, কারণ সে ছিল ভীষণ নম্র-ভদ্র। সকলকে সালাম দিয়ে কথা বলত। সব সময় নতুন কাপড় পরিধান করতে চাইত। নিজেকে সবসময় ফিটফাট রাখত, পুরাতন কাপড় পরতে চাইত না। প্রায়ই নতুন কাপড়ের জন্য বায়না ধরত, আর ইনিয়েবিনিয়ে নিজের আবদার পূরণ করে নিত। এখন আর কেউ বায়না করে না। আমার কলিজাটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে। ছেলেমানুষী করত খুব। বাচ্চাদের মতো এটা ওটা চাইত। খুবই আবেগী ছিল, বিশেষ করে পোশাকের ব্যাপারে। মটরসাইকেল চালানোর প্রবল আগ্রহ ছিল। এক শবে বরাতে প্রিয় নানা ওকে শখের মটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। নানা-নানি তাকে অনেক ভালোবাসতেন, তাদের খুব আদরের ছিল। এখন সেই মটরসাইকেল পড়ে আছে, আর আমার বাবাটা গোরস্থানে শুয়ে আছে। বাজারে গেলেই বলত, “একটা চকলেট এনো।” আইসক্রিম, চকলেট—এমন মিষ্টি খাবারগুলো অনেক পছন্দ করত। ঝাল খেতে পারত না। খুব আবেগপ্রবণ ছিল আমার বাবা।‘ প্রথম দিকে আন্দোলনে যায়নি। ৫ আগস্ট প্রথম বের হয়েছিল। নিষেধ শুনল না। বলল, "আমি একটু সামনে থেকে আসতেছি, খাবার দাও।" এই বলে সে চলে গেল—ফিরল লাশ হয়ে। সেদিনই ডিপফ্রিজ পরিষ্কার করে দিল। বলল, "এটা পরিষ্কার করে দিলে কী দিবা আমাকে?" আমি অবশিষ্ট মাংস রান্না করে দিলাম, কিন্তু বাবা আমার খেয়ে যেতে পারল না। সিসি ক্যামেরায় দেখেছি, হাসতে হাসতে বাসা থেকে বের হয়েছে। আল্লাহ কী কল্যাণ রেখেছেন, জানি না। কেন তাঁকে বেছে নিলেন, আল্লাহই ভালো জানেন।‘ মা হিসেবে আমার প্রতি যত্নবান ছিল । আমার উচ্চ রক্তচাপ। প্রতিদিন খোঁজ নিত, ঔষধ আছে কিনা। এখন কে খোঁজ নেবে? বিকাল হলে প্রতিদিন একবার ওর ছোট ভাই আর আমাকে শহর ঘুরিয়ে আনত। সবার সঙ্গে মিশুক ছিল, সহজে আড্ডা জমাতে পারত। পথশিশুদের চকলেট কিনে খাওয়াত। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ ফজল মাহাদীর বাবা মফিজুর রহমানের সাথে বিচ্ছেদোত্তর তার মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন এসআই জামানকে, যিনি বর্তমানে খুলনায় কর্মরত আছেন। বাবার আয় থেকেই তাদের সংসারের খরচ চলে। পরিবারটি মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করলেও মোটামুটি স্বচ্ছল অবস্থায় আছে। শহীদের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল নাম : ফজল মাহাদী, জন্ম: ১২ ডিসেম্বর ২০০৫ পিতার নাম : মফিজুর রহমান মায়ের নাম : রওশনারা রুনা মায়ের পেশা : গৃহিনী মায়ের বয়স : ৩৬ পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ ভাই-বোন : ১. জায়ান, বয়স ০২ (বৈপিত্রেয় ভাই) জন্মস্থান : যশোর পেশা/পদবী : ছাত্র নিজ জেলা : যশোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : যশোর সরকারী কলেজ ঘটনার স্থান/পয়েন্ট/এলাকা : হোটেল জাবের, চিত্রার মোড়, যশোর আক্রমণকারী : নেই। আগুন নেভাতে গিয়ে আটকা পড়ে। বাঁচতে গিয়ে পাশের ছাদে লাফ দিলে- পড়ে গিয়ে মৃত্যু আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৪:৩০ টা মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ০৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টা, হোটেল জাবের, চিত্রার মোড়, যশোর শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : রাজবাড়ী কবরস্থান, চাচড়া, যশোর। (যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/রশগঊট৪২ুনসি৫ফঊংজ৮) (জিপিএস লোকেশনসহ) পরামর্শ পরিবারটির কোনো প্রকার সহযোগিতা আবশ্যক নয়। তবে শহীদের মা-কে মাসিক বা এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে। এই সহায়তা তার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে সাহায্য করবে এবং পরিবারের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: ফজল মাহাদী
Image of মো: ফজল মাহাদী
Image of মো: ফজল মাহাদী
Image of মো: ফজল মাহাদী
Image of মো: ফজল মাহাদী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: উসামা

মো: রাজু আহমেদ

মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব

এম এম তৌহিদুর রহমান

 মো: ইউসুফ শেখ

মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির

মো: মারুফ হোসেন

মো: মাসুদ রানা মুকুল

মো: সাব্বির হোসেন

মো: আহাদ আলী

মো: বাবলু ফরাজী

মো: আশরাফুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo