Image of মো: ইউসুফ আলী

নাম: মো: ইউসুফ আলী

জন্ম তারিখ: ৩ এপ্রিল, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী। পঞ্চম শ্রেণী, সর্বশেষ ৯ পারা হেফজ সম্পন্ন করেছেন শাহাদাতের স্থান : চাঁচড়া ডালমিল ইউনিয়ন, ৫ নং ওয়ার্ড, সদর, জেলা: যশোর

শহীদের জীবনী

মো: ইউসুফ আলী, এক উদ্যমী ও প্রতিশ্রুতিশীল কিশোর, যিনি ছোটবেলাতেই শিক্ষা ও ধার্মিকতাকে আলিঙ্গন করেছেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করার পর, তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে আসার জন্য যশোর রেলওয়ে স্টেশন মাদরাসায় হিফজ কোর্সে ভর্তি হন। ইতোমধ্যেই তিনি ৯ পারা কুরআন মুখস্থ করেছেন, আর তাঁর এই ধারাবাহিকতা তাঁকে একদিন পূর্ণ হাফেজে পরিণত করবে বলে আশা ছিল । ইউসুফের জন্ম ৩ এপ্রিল, ২০০৯ সালে, যশোরের এক শান্ত ও সরল গ্রাম চাঁচড়া ডালমিলে। তার পিতা মো: মানিক হোসেন, একজন পরিশ্রমী ড্রাইভার, যিনি পরিবারের প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন নিঃস্বার্থভাবে। আর মা শাহিনা আখতার, একজন গৃহিণী, যিনি স্নেহের পরশে সন্তানদের লালন করে চলেছেন। ইউসুফের পরিবারে মোট পাঁচজন সদস্য—দুই বোন ও এক ভাই সহ এক সুন্দর বন্ধনে আবদ্ধ একটি পরিবার। এই পরিবারের ইতিহাসও গর্বের, কারণ ইউসুফের একজন আত্মীয় ২০০৪ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হন। তার এই আত্মত্যাগ তাদের পরিবারকে একটি অনন্য সম্মানের আসনে বসিয়েছে। ইউসুফের শৈশব কাটছে এই পরিবার ও গ্রামের পরিবেশে, যেখানে ধর্ম, শিক্ষা এবং বীরত্বের গল্প তাকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে তুলছে। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখ, বাংলাদেশের ইতিহাসে গভীরভাবে খোদিত একটি অধ্যায়। দীর্ঘ ষোলো বছরের শাসনের পর, ছাত্র জনতার আন্দোলনের তীব্রতায় ভেঙে পড়ে শেখ হাসিনার সরকার। এদিন জনতার উল্লাসে ভরে ওঠে শহরের প্রতিটি প্রান্ত। এই আন্দোলন ছিল একটি জাতীয় মুক্তির প্রতীক, আর সেই মুক্তির মিছিলে শামিল হয়েছিল যশোর রেলস্টেশন মাদ্রাসার কিশোর ছাত্র, ইউসুফ আলী। ৫ আগস্টের সেই ভোরে, ইউসুফ আলী নতুন জামাকাপড় পরে, ভাইয়ের কিনে দেওয়া নতুন জুতো পায়ে, উচ্ছ্বাস আর আশায় ভরা হৃদয় নিয়ে মিছিলে বের হয়। ঘর থেকে বেরোনোর আগে মায়ের কাছে এসে বলে, "আম্মু, মিছিলে যাচ্ছি। তিনটার মধ্যে ফিরে আসবো।" মায়ের চোখে ছিল উদ্বেগের ছাপ, কিন্তু ছেলেকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে দেখে বিদায় দেন। ইউসুফ, মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে, রাস্তায় নেমে যায় বিজয় মিছিলে। আনুমানিক দুপুর দুইটার দিকে, চাঁচড়া চেকপোস্টে ইউসুফের সাথে তার মেজো ভাই ইয়াসিনের দেখা হয়। বিজয় মিছিলের ভীড়ে, তারা কয়েক মুহূর্তের জন্য কথা বলে। ইয়াসিন তাকে বাসায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়, আর ইউসুফ শান্ত গলায় সম্মতি জানায়, "ভাই, আমি দ্রুত ফিরবো।" কিন্তু এই কথাই ছিল দুই ভাইয়ের শেষ কথোপকথন। সেই মিছিলের উত্তাল ভীড়ে ইউসুফ যেন হারিয়ে যায়। বিকেলের দিকে ইউসুফের পরিবারের কাছে আসে মর্মান্তিক সংবাদ- জাবির হোটেলে আগুন লেগেছে এবং সেখানে তিনজন ছেলে নিখোঁজ। উৎকণ্ঠায় ছুটে যায় ইউসুফের পরিবার, তাকে খুঁজতে শুরু করে জাবির হোটেল সংলগ্ন এলাকা এবং হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু কোনো খবরই পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত আটটার দিকে তারা জানতে পারে যশোর সদর হাসপাতালে বেশ কিছু মৃতদেহ আনা হয়েছে। শঙ্কা ও দুশ্চিন্তায় সেখানে ছুটে যায় পরিবার। তবে ইউসুফের চেহারা এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, প্রথমে তাকে চেনা যাচ্ছিল না। তবুও তার ভাই ইয়াসিন, যিনি কিছুদিন আগে তাকে নতুন জুতো কিনে দিয়েছিলেন, সেই জুতো দেখে ভাইকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। মুহূর্তটি ছিল পরিবারের জন্য এক অকথ্য হৃদয়বিদারক যন্ত্রণার। ইউসুফ আলী আর ফিরে আসেনি। পরদিন, ৬ আগস্ট সকাল ১০টায়, স্থানীয় কবরস্থানে শহীদ ইউসুফ আলীকে জানাজার শেষে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। তার কোমল হৃদয়ে ছিল কোরআনের হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন, আল্লাহর কালাম মুখস্থ করার দৃঢ় সংকল্প। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ইউসুফ আলী চিরবিদায় নিলো, রেখে গেল তার অপূর্ণ স্বপ্ন, মায়ের অশ্রু এবং পরিবারের বেদনাময় স্মৃতি। তার এই শহীদী মৃত্যু শুধুমাত্র তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য ছিল এক গভীর শোকের প্রতীক। এই সাহসী কিশোর বিজয়ের মিছিলে জীবন উৎসর্গ করে গেলো, দেশের পরিবর্তনের স্বপ্নে অবিচল থেকে, নতুন দিনের প্রার্থনায় অনন্তের পথে পা বাড়ালো। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: ইউসুফ আলী পেশা : শিক্ষার্থী। পঞ্চম শ্রেণী পাশের পর যশোহর রেলওয়ে স্টেশন মাদরাসায় হিফজে অধ্যয়নরত ছিল। সর্বশেষ ৯ পারা হেফজ সম্পন্ন করেছেন জন্ম তারিখ : ০৩//০৪/২০০৯ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: চাঁচড়া ডালমিল, ইউনিয়ন : ৫ নং ওয়ার্ড, থানা: সদর, জেলা: যশোর পিতা : মো: মানিক হোসেন বয়স : ৫০ পেশা : ড্রাইভার মাতার নাম : শাহিনা আকতার, পেশা: গৃহিণী, বয়স: ৪৫ আহত ও শাহাদাতের তারিখ: ০৫ আগস্ট ২০২৪ পারিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন ভাইবোনের সংখ্যা : ২ বোন ১ ভাই ১) মো: জীবন, বয়স: ২৯ পেশা: টেইলারিং মাস্টার ২) মো: ইয়াসিন, বয়স ২৬ পেশা: ড্রাইভার , ৩) মাহিমা আক্তার, বয়স - ১১, পেশা, শিক্ষার্থী প্রস্তাবনা শহীদ ইউসুফ আলীর বাবা, মো: মানিক, একজন ড্রাইভার। তার আয় মূলত সার্ভিসের উপর নির্ভরশীল, যা পাঁচজন সদস্যের পরিবারের জন্য অত্যন্ত সীমিত। ডাল মিলপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন তারা, যেখানে দৈনন্দিন জীবনের খরচ মেটানোও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। মো: মানিকের একমাত্র ছেলে ইউসুফ আলী একটি স্বাধীন দেশের জন্য শহীদ হয়েছে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে, মৌলিক চাহিদা মেটাতে এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সাহায্য প্রয়োজন।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: ইউসুফ আলী
Image of মো: ইউসুফ আলী
Image of মো: ইউসুফ আলী
Image of মো: ইউসুফ আলী
Image of মো: ইউসুফ আলী
Image of মো: ইউসুফ আলী
Image of মো: ইউসুফ আলী
Image of মো: ইউসুফ আলী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: নবী নুর মোড়ল

বিপ্লব শেখ

মো: আসিফ হাসান

সামিউর রহমান সাদ

মো: আবুল বাশার আদম

এম এম তৌহিদুর রহমান

মো: রিয়াদ শেখ

মো: সুমন মিয়া

আলম সরদার

মো: খালিদ হোসেন শান্ত

মো: মেহেদী হাসান রাব্বি

সোহান শাহ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo