জন্ম তারিখ: ২৩ মে, ২০১২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ছাত্র, ৭ম শ্রেণি শাহাদাতের স্থান : জাবের হোটেলের সামনে
"দেশের জন্য শহীদ হয়ে যাবো তাতে তোমাদের সমস্যা কি? আবু সাইদ মারা যাওয়ার পর তার মা যদি ধৈর্য ধরতে পারে তাহলে তোমরা কেন পারবা না। আমার জন্য তোমরা দোয়া করো।" যশোর সদরের কারবালা রোডের রাজ টেইলার্সের মালিক। জনাম মো: রুস্তম আলীর ছোট ছেলে মো: মেহেদী হাসান। মেহেদী হাসান পুলেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি মেহেদী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথেও যুক্ত ছিলেন। তিনি জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন ফুলকুড়িঁর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মেহেদী হাসান জন্মগ্রহণ করেন ২০১২ সালের ২৩ মে। তার জন্মস্থান যশোরের কৃষ্ণবটি গ্রাম। তার পিতার নাম জনাব মো: রুস্তম আলী এবং মায়ের নাম মোসা: মনোয়ারা বেগম। তারা ৪ ভাইবোন।শাহাদাতের ঘটনা জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আরম্ভ হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমান্বয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রুপ নেয়। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এতে যুক্ত হয়। আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের হামলা অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মত। সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। শহর থেকে গ্রামে, রাজপথ থেকে অলিগলি সবজায়গায় বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। যশোরও এর ব্যতিক্রম নয়। যশোরের সাধারণ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। তারও প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নেয়। বিরত ছিল না ১২ বছরের শিশু মেহেদীও। তার চোখে মুখে ছিল স্বপ্ন। একটি সোনালি প্রভাতের স্বপ্ন। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। যেখানে রাত পোহালেই কোনো মায়ের বুক খালি হবে না। যেখানে প্রাণ দিতে হবে না মুগ্ধের মত কোনো স্বপ্নবাজ তরুণকে। তাইতো সে দীপ্ত শপথে এগিয়ে যায়। ঝাপিয়ে পড়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। বাড়িতে বাবা মায়ের উৎসাহ এবং নিজের প্রতিবাদী মানসিকতা তাকে নিয়মিত মিছিলে যেতে অনুপ্রেরণা যোগায়। এদিকে রংপুরে পুলিশের গুলিতে শহীদ আবু সাইদ শহীদ হয়। এ দৃশ্য অন্য সবার মত মেহেদীর মনেও পীড়া দেয়। তখনি তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, প্রয়োজনে নিজের জীবনটাও বিলিয়ে দিব। তবু অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষ করব না। শহীদ মো: মেহেদী হাসানের গর্বিত মা বলেন, "আমরা তাকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করিনি। আর নিষেধ করলেও সে শুনত না। বলত দেশের জন্য শহীদ হয়ে যাবো তাতে তোমার সমস্যা কি? বিশেষ করে রংপুরে আবু সাইদ মারা যাওয়ার পর তাকে আর ঘরে আটকে রাখা যেত না। আমাকে বলতো, আবু সাইদ মারা যাওয়ার পর তার মা যদি ধৈর্য ধরতে পারে তুমি কেন পারবা না।? আমার জন্য তোমরা দোয়া করো।" ৫ আগস্ট ২০২৪ দুপুরে স্বৈরাচার পতনের সংবাদ আসার পর মেহেদী বাবার কাছ থেকে ৩০ টাকা নিয়ে পরনের জামা পরেই বেরিয়ে যায়। চাঁচড়া মোড় থেকে সে ছাত্র-জনতার নিজয় মিছিলে যোগদান করে। মিছিল চাঁচড়ার মোড় থেকে শহরের দিকে গেলে মেহেদীও মিছিলের সাথে শহরের দিকে যায়। জাবের হোটেলের সামনে গেলে কিছু লোকজন বলাবলি করে সেখানে বোমা বিস্ফোরণ হবে। বোমা বিস্ফোরণ থেকে বাচতে মেহেদীসহ অনেকে জাবির হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই হোটেলেই অগ্নি বিস্ফোরণ ঘটে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। তারা সকলেই ভিতরে আটকা পড়ে। বের হতে না পেরে মেহেদী, সাথের একজনের ফোন থেকে তার মায়ের কাছে ফোন দিয়ে বলেন, "মা আমরা জাবির হোটেলে আটকা পড়ে গেছি। নিচে সব আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এখান থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা নেই। আমি কোনো ভুল করে থাকলে মাফ করে দিও। আর তুমি একটু মামাকে ফোন দাও। হেলিকপ্টার নিয়ে আসতে বলো। আমাদের উদ্ধার করো।" এই ছিল তার সাথে পরিবারের সর্বশেষ কথা। তারপর মেহেদীর মা ঐ নাম্বারে বহুবার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। ছেলের শেষ আবদার হেলিকপ্টার নিয়ে আমাকে উদ্ধার কর। ছেলের শেষ আবদার পূরণ করতে পারল না মা। মায়ের উপর অভিমান করে চিরতরে কথা বলা বন্ধ করে দিল মেহেদী। সেই ফোন কলটির কথা মনে পড়রেই মায়ের অন্তর কেঁপে উঠে। দাফন ঘটনার দিন রাত ১১ টায় ফায়ার সার্ভিস এসে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মৃত দেহ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মেহেদীর মৃতদেহ শনাক্ত করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। ৬ আগস্ট জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি শহীদের মা: ছেলের একটি আবদার পূরণ করতে না পারায় মায়ের সাথে চিরতরে কথা বলা বন্ধ করে দিল। এই দু:খ রাখার জায়গা নেই মায়ের। কানে শুধু একটি কথায় ভেসে আসে, "মা, মামাকে বল হেলিকপ্টার পাঠাতে।" অসহায় মায়ের কি সে সামর্থ্য আছে। পারিবারিক অবস্থা মেহেদী হাসানের পিতা একজন দর্জি। তার আয়ের মাধ্যমেই ৫ জনের পরিবারের ভরনপোষণ হয়। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শহীদ মেহেদী হাসান পেশা : ছাত্র, ৭ম শ্রেণি বয়স : ১২ বছর জন্ম তারিখ : ২৩/০৫/২০১২ জন্ম স্থান : কৃষ্ণবটি, আরবপুর, যশোর পিতা : জনাব মো: রুস্তম আলী মাতা : মোছা: মনোয়ারা বেগম আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, আগুনে দগ্ধ হন শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কৃষ্ণবটি, ইউনিয়ন: আরবপুর থানা: সদর থানা জেলা: যশোর বর্তমান ঠিকানা : ঐ পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা।