জন্ম তারিখ: ৩০ এপ্রিল, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : শিক্ষার্থী শাহাদাতের স্থান : যশোর সদর হাসপাতাল
সরকারি এমএম কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র সোহানুর রহমান (শিহাব) লেখা পাড়ার পাশাপাশি বাবার ব্যবসায়ে সহযোগিতা করতেন। তার জন্ম ৩০ এপ্রিল ১৯৯৮ সাল। পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো হলেও, সোহান সবসময় নিজেকে এবং পরিবারকে আরও উন্নত অবস্থানে নেয়ার স্বপ্ন দেখতেন। যশোর শহরের কিসমত নওয়াপাড়ার বাসিন্দা শহীদ সোহান ছিলেন পরিবারের আশার আলো। তায়মান রহমান সাওয়াব নামে তার একটি চার বছর বয়সী ছেলে সন্তান আছে। শহীদ সোহানের বাবা আনোয়ার হোসেন লাল্টু নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সার ও কীটনাশক কারখানা পরিচালনা করেন। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল এক জ্বলন্ত অধ্যায়, যা দেশের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক। কোটার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রথম থেকেই জনগণের সমর্থন পায় এবং দ্রুত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী আক্রমণ এবং সরকারের কঠোর দমননীতি সত্ত্বেও আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ সাতজন শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য স্বৈারাচারী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়েও মানুষ হত্যা করে, যার ফলে সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। অবশেষে ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। সারা দেশে বিজয়ের আনন্দে মিছিল বের হয়, কিন্তু সেই আনন্দের মাঝেও যশোরে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা এবং সেখানেই শহীদ হন সোহানুর রহমান শিহাব। যেভাবে শহীদ হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই শহীদ সোহান সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতা যশোররে রাজপথ দখলে নিয়ে স্বৈরাচার পতনের এক দফা দাবিতে শ্লোগনে মুখর হয়ে হয়ে উঠে। দুপুর ২ টায় রক্তপিপাসু স্বৈরশাসকের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের চর্তুদিক থেকে ছাত্র জনতা বিজয় মিছিল নিয়ে শহরের দিকে ছুটে আসে। এ সময় কিছু দুর্বৃত্ত ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী যশোরের ত্রাস আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদোরের প্রিন্টিং প্রেস ও জাবির হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা হোটেলে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য হোটেলের ভিতর ঢুকে পড়েন। এক পর্যায়ে আগুনের উত্তাপ বেড়ে গেলে উদ্ধারকারী জনতার একটি অংশ হোটেলের মাঝে আটকে পড়েন। শহীদ সোহান তার ছোট ভাই রোহানকে হোটেলের নিচে রেখে বন্ধুদের উদ্ধারের জন্য হোটেলের ভিতরে ঢুকে যান। কিন্তু পরবর্তিতে তিনি আর বের হতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর তিনি হোটেলের ৫ম তলা থেকে ছোট ভাইয়ের সাথে ইশারায় কথা বলেন এবং তাদেরকে উদ্ধার করতে বলেন। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ছোট ভাই বাবাকে ফোন করেন এবং ভাইকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে থাকেন। ফায়ার সার্ভিসের রেসকিউ টিম পাঁচ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন এবং আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে যশোর সদর হাসপাতাল মর্গে শহীদ সোহানের মরদেহ সনাক্ত করা হয়। তাকে গ্রামের বাড়ি গুরুলিয়ায় দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য শহীদ সোহান সদালাপী ও বন্ধু বাৎসল ছিলেন। প্রতিবেশীরা তাকে খুবই ভালোবাসতো। তিনি ছিলেন পরিবারের মধ্যমণি ও আশার আলো। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল পূর্ণ নাম : মো: সোহানুর রহমান (শিহাব) পেশা : শিক্ষার্থী ঠিকানা : কিসমত নওয়াপাড়া, যশোর সদর, যশোর জন্ম তারিখ : ৩০/০৪/১৯৯৮ পিতা : আনোয়ার হোসেন লালটু (৫০) পিতার পেশা : ব্যবসা মাতার নাম : কহিনুর আক্তার (৪৫) মাতার পেশা : গৃহিণী শহীদের ভাই : তানভির হাসান রোহান (২২) পেশা : শিক্ষার্থী। অনার্স, উপশহর ডিগ্রি কলেজ শহীদের ছেলে : তায়মান রহমান সাওয়াব বয়স : ৪ মাস পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। শহীদের শিশু সন্তানের জীবনধারণের এবং পড়াশোনার সমস্ত ব্যয় বহন করা। ৩। শহীদের স্ত্রীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।