জন্ম তারিখ: ৩ অক্টোবর, ১৯৮৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : বার্মিজ গলি এন, এস রোড কুষ্টিয়া সদর থানা, কুষ্টিয়া
পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সুরুজ আলী বাবু আলুর দম,ফুচকা এগুলো বিক্রি করতেন। পরবর্তী তে স্বর্ণকারের কাজ শিখে ২০২২ সালে নিজের জমানো কিছু টাকা ও ঋনের অর্থ নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে একটি দোকান ভাড়া করে স্বর্ণকারের কাজ শুরু করেন। যৌবনের শুরুতে সায়মা নামের এক মেয়ের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ে আলিম ক্লাসে, ছেলে ফয়সাল আহমেদ হাফিজিয়া মাদ্রাসায় নাজরা ও ছোট মেয়ে রুবাইয়া মাদ্রাসাতে নার্সারি ক্লাসে লেখাপডা করে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা শহীদ হওয়ায় তাদের পড়াশুনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপট শহীদ সুরুজ জীবনের কাহিনী যেন এক অশ্রুসিক্ত বেদনার করুণ ইতিহাস। স্ত্রী ও তিন সন্তানের পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অনেক কষ্টে একটি স্বর্ণকারের দোকান নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। ভালোই চলছিল তখন সংসার। ছেলে মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে তিনটি বাচ্চাকেই মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলেন। স্বপ্ন ছিল ছেলে হাফেজ হবে এবং মেয়েরা ধর্মীয় আদর্শে বড় হবে। কিন্তু ৫ই আগস্ট পুলিশের বুলেটের আঘাতে জীবন প্রদীপ চলে যাওয়ার সাথে সাথে তার লালিত স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মানে ছাত্রদের সেই আন্দোলনে তিনি সমর্থন করে আসছিলেন। কিন্তু ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও খুনি যুবলীগকে লেলিয়ে দিয়ে অসংখ্য ছাত্রকে আহত করে। এরপর এক দফার আন্দোলন শুরু হলে খুনি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবীতে গড়ে ওঠা উত্তাল জনসমুদ্রে তিনিও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ৫ই আগস্ট বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে যখন ছাত্র জনতা সেদিন সকাল ১০টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে কুষ্টিয়া সদর থানার পাশে এন, এস রোডে বার্মিজ গলিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার সাথে যুক্ত হন। আন্দোলন চলাকালে সদর থানার দারোগা সায়েব আলীর নেতৃত্বে আলফা টিম নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। আনুমানিক বিকাল তিনটা থেকে চারটার মধ্যে আন্দোলনের সাহসী বীর শহীদ সুরুজ আলীর পেটের মাঝে গুলি লাগে। মুহুর্তই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শহীদের সাথীরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও শ্বশুরের বক্তব্য বাল্যবয়স থেকেই শহীদ বাবু মিয়া (সুরুজ) খুবই সাহসী, নম্র ও পরোপকারী ছিলেন। মানুষের বিপদাপদে সবার আগে ছুটে আসতেন। শ্বশুর নৈশ প্রহরী আব্দুল ওয়াহাব বলেন, আমার জামাই খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। প্রতিদিন দোকান থেকে বাড়ি আসার সময় আমার সাথে দেখা করে আসতো। আমাকে খুবই ভালোবাসতেন। আমিও তাকে আমার ছেলের মতই ভালোবাসতাম। তার কথা মনে পড়লে হৃদয় বেদনাবিধুর হয়ে যায়। এলাকাবাসী জানান, দেশ একজন সাহসী বীর যোদ্ধা ও দেশ প্রেমিক নাগরিককে হারালো। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ সুরুজ আলী বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে মারা যান। তার মৃত্যুতে পরিবারের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়। এখন তারা চিন্তিত, কিভাবে চলবেন এবং কিভাবে সংসারের খরচ চালাবেন। পরিবারের সম্পদ বলতে কিছুই নেই। তাদের আশা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে। যাতে তাদের জীবনে কিছুটা আলো ফিরে আসে। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : বাবু মিয়া (সুরুজ) জন্ম : ০৩/১০/১৯৮৩ পিতা : মৃত নওশের আলী মাতা : রাহেলা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: শালদহ, ইউনিয়ন: হাটশ হরিপুর, থানা: কুষ্টিয়া সদর, জেলা: কুষ্টিয়া বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত স্ত্রী : সায়মা সন্তান : দুই মেয়ে এক ছেলে। পেশা : ব্যবসায়ী ঘটনার স্থান : বার্মিজ গলি এন, এস রোড কুষ্টিয়া সদর থানা, কুষ্টিয়া। আহত হওয়ার সময়কাল : ০৫/০৮/ ২০২৪ আনুমানিক তিনটা ৩০ মিনিট থেকে চারটার মধ্যে শাহাদাতের সময়কাল : ০৫/ ০৮/ ২০২৪ আনুমানিক তিনটা তিরিশ থেকে চারটার মধ্যে আঘাতের ধরণ : পেটের মাঝামাঝি গুলি লাগে। আক্রমণকারী: পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : হটিস হরিপুর ঈদগাহ কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. বড় মেয়েকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া। ২. একটি দুগ্ধজাত গরু ক্রয় করে দেয়া। ৩. ছোট ছেলে ও মেয়েকে এতিম প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা।