জন্ম তারিখ: ২৩ ডিসেম্বর, ২০১১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা :স্যানিটারি শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : কুষ্টিয়া মডেল থানা
মা বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান শহীদ আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিন। কুষ্টিয়া জেলার সদর থানার চড়থানা পাড়া গ্রামে ২৩ আগস্ট ২০১১ সালে জন্মগ্রহণ করে। কুষ্টিয়াতেই বড় হয় সে। ৬ নং পৌর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল মুস্তাকিন। বাবা জনাব লোকমান হোসেন (৫০) একজন বাবুর্চির কাজ করলেও অসুস্থতার কারণে এখন কর্মহীন। আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিন থাকত বাবা-মায়ের সাথে চড়থানা পাড়াতে। তিন বোনের অতি আদরের ভাই মুস্তাকিন। তিন বোনই বিবাহিত। থাকেন নিজ নিজ স্বামীর বাড়িতে। শহীদ মুস্তাকিনের জীবনপ্রবাহ পরিবারের আর্থিক দুর্গতিতে ৪র্থ শ্রেণীর পর তাঁর পড়াশুনা থেমে যায়। এর আগে কিছুদিন মাদ্রাসায়ও অধ্যয়ন করেছিল। বাবাকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য স্যানেটারির কাজ শুরু করে। ফায়ার সার্ভিস অফিসের সামনের সড়কের পাশে বাবার চায়ের দোকান ছিল। এছাড়া বাবুর্চির কাজ করতেন জনাব লোকমান। এভাবে নানা টানাপোড়নের মধ্যেই চলতো তাঁদের সংসার । পূর্বের প্রেক্ষাপট কুষ্টিয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১৭ জুলাই দুপুরে দিকে। আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের মজমপুর গেটে অবস্থান করে। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেন। মজমপুর গেটে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান করে। ছাত্রলীগের একটি মিছিল মজমপুর গেটে পৌঁছালে পুলিশের অনুরোধে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মজমপুর গেট থেকে চৌড়হাস মোড়ে অবস্থান করে। এই ঘটনার পরে অন্যদিকে লাঠিসোঠা নিয়ে পৌরসভার ভেতরে সংগঠিত হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে তারা এনএস রোড প্রদক্ষিণ করেন। বিকেল ৫টার দিকে তারা ৩০ থেকে ৪০ টা মোটরসাইকেল ও হাতে লাঠি নিয়ে চৌড়হাস মোড়ের দিকে যাত্রা করেন। এ সময় পুলিশের তিনটি ব্যারিকেট উপেক্ষা করে কোটা আন্দোলনের সমাবেশে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। শহীদ হওয়ার দিন আমজনতার উপর চালানো এ চরম নৃশংসতায় আর টিকতে পারেনি সন্ত্রাসী হাসিনা। ৫ আগস্টের গণভবনমুখী কর্মসূচী তাকে গদি ছাড়তে বাধ্য করে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা শহরের মজমপুর গেটে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কুষ্টিয়া মডেল থানা ঘিরে ফেলে। ঘটনার দিন ৫ আগস্ট সকালে সে বাবার জন্য খাবার নিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যায়। সেখান থেকে ফিরে ছাত্র-জনতার ভিড়ে মিশে যায়। এসময় বিজিবি ও সেনাসদস্যরা পুলিশ ও জনতার মধ্যে দাঁড়িয়ে পুলিশকে নিরস্ত্র হতে এবং গুলি ছোঁড়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানায়। কিন্তু স্বৈরাচার সরকারের লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশ গুলি ছোঁড়া বন্ধ করেনি। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে নিরস্ত্র কিশোর আব্দুল্লাহ। গুলিটি তার পাঁজর ভেদ করে অপর প্রান্ত দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ সময় আরো কয়েকজন গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেনা ও বিজিবি কর্মকর্তারা তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে চালাতে থানা থেকে বের হয়ে পুলিশ লাইনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বিজয়ের এই মুহূর্তে বেলা ২টা থেকে ৩টার মধ্যে ছয়জন নিহত হয়। আব্দুল্লাহর পরিবার সূত্রে জানা যায়, যায় আব্দুল্লাহ তিন ভাই-বোনের সংসারে বাবা-মা দুইজনই অসুস্থ ও কর্মহীন। কিশোর আব্দুল্লাহ স্যানিটারি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরিবারের ভরণ পোষণ চালাতেন। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। আব্দুল্লাহর বাবার চিকিৎসার খরচ মেটাতে আর কেউই রইল না। পরিবারের বর্তমান অবস্থা ছেলের মৃত্যুর পর চায়ের দোকানটি বন্ধ করে দেন শহীদের বাবা। অসুস্থ শরীরটা আর কাজের জন্য সাঁয় দিচ্ছে না তাই মানবেতর জীবন যাপন করছে শহীদ মুস্তাকিনের পরিবার। জামায়াতে ইসলামী কুষ্টিয়া জেলার নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন সুহৃদ ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতা পেলেও স্থায়ী কোনো সমাধান না হওয়ায় এ শহীদ পরিবারটি বড় অসহায়ত্বের মধ্যে আছে। শহীদ মুস্তাকিনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নাম : আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিন জন্ম : ২৩-১২-২০১১ পিতার নাম : মো: লোকমান হোসেন মাতার নাম : মৃত হ্যাপি বেগম শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫-০৮-২০২৪ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চরথানা পাড়া, উপজেলা: কুষ্টিয়া সদর, জেলা: কুষ্টিয়া পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। শহীদের বাবার সু চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ৩। স্থায়ীভাবে ব্যবসার জন্য ব্যবস্থা করা।