জন্ম তারিখ: ১৮ অক্টোবর, ১৯৮৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : রামপুরা
শহীদ আলমগীর সেখ জন্ম কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামে। মুদি দোকানি মোঃ ইজহারুল হকের ছেলে শহীদ আলমগীর। তার মা আলেয়া খাতুন একজন গৃহিনী। তার পিতা মাতার ঘরে তিনি ছাড়াও রয়েছে আরও ৩ সন্তান। সন্তানদের মধ্যে তিনি বড়। শহীদ আলমগীর পেশায় ছিলেন একজন ড্রাইভার। তিনি ঢাকার হেল্থ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল এর গাড়ী চালাতেন। তাঁর বাবার ব্যবসা থেকে মাসিক ১০,০০০ দশ হাজার টাকা আয় হয়। বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে যা আয় হয়, তার সাথে আলমগীরের আয়ের টাকা দিয়ে ছোট ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ সহ পরিবারের খরচ চলত। শহীদ আলমগীরের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে তুলি জাহান আসমার বয়স ১১ বছর। পড়াশোনা করে ৪র্থ শ্রেণীতে। ছেলে আব্দুল্লাহ আওলাদ এর বয়স ৫ বছর। ১৯ জুলাই, ২০২৪ এ দুই মেয়েকে এতিম করে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন শহীদ মোঃ আলমগীর। ব্যক্তিগত জীবন ১৯৮৭ সালের ১৮ অক্টোবর কুস্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা গ্রামে বাবা ইজহরুল হক ও মা আলেয়া খাতুন এর কোল আলো করে পৃথিবীতে আসেন আলমগীর শেখ। তাদের অভাবের সংসারে জন্ম নেয় আরও চার ভাই। পারিবারিক দৈন্যতায় এবং ছোটো ভাইদের জীবনের পথ চলা সাবলীল করতে বেশিদুর পড়াশোনা চালাতে পারেননি আলমগীর শেখ। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুনোর আগেই পড়ালেখায় ইতি টানেন তিনি। যোগ দেন একটি মুদি দোকানের কর্মী হিসেবে। দীর্ঘদিন সেখানে কাজ করেন। তাঁর শৈশব কৈশর কাটে এরকম নানা পেশায় নিয়োজিত থেকে। যৌবনে পদার্পনের পর বিয়ে করে সংসারী হন আলমগীর শেখ। বিয়ের পর পারিবারিক খরচা বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশি আয়ের স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকার রামপুরা এলাকায় অবস্থিত ‘হেল্থ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল’ নামের একটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে একজন ড্রাইভার হিসেবে কাজ শুরু করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর পাঠানো টাকাতে চলত ছোট ভাই আজাদের পড়াশোনা সহ পরিবারের অন্যান্য খরচ। আলমগীর শেখের ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান। তাদের নাম রাখা হয় তুলি জাহান আসমা ও আব্দুল্লাহ আওলাদ। শাহাদাতের ঘটনার বিবরণ দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ঢাকা সহ সমগ্র দেশ তখন উত্তাল। দেশে দেড় যুগ ধরে অবৈধ ভাবে ক্ষমতার মসনদে বসে থাকা আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনের বিপরীতে তারা কোনো প্রকার সমাধান না করে সেটি দমন করার জন্য নিষ্ঠুর নীতি অবলম্বন করে। সরকারের পেটোয়া বাহিনী তথা ছাত্রলীগ আর পুলিশের মাধ্যমে রাবার বুলেট, ছড়া গুলি, লাঠিচার্জ আর সবচয়ে মারাত্মক বিষয় হলো ছাত্রদের বুক ঝাঁঝরা করতে থাকে তাজা বুলেট। ১৯ জুলাই’২৪ জুমার নামাজের শেষে নিজ কর্মস্থলে গিয়েছিলেন। ছাত্ররা আন্দোলন করছিল রামপুরাতে নিরীহ ছাত্রদের উপরে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে পুলিশ সাথে লাঠিচার্জ তো চলছেই। প্রায় দেড় যুগ ধরে চলা আওয়ামী সন্ত্রাসবাদে আমজনতা এতটাই অতিষ্ঠ ছিল যে তাদেরকে এ ধরনের নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের পরেও দমানো যাচ্ছিল না। আন্দোলনের সময় যত গড়াচ্ছিল আন্দোলনের ভয়াবহতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছিল এরপর হঠাৎ আকাশ থেকে গুলি বর্ষণ হতে শুরু করে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুঁড়লে কিছু লোক আহত হয়। শহীদ আলমগীর আন্দোলনরত আহত শিক্ষার্থীদের পানি খাওয়ানোর জন্য নিচে যায়। ফেরার পথে আনুমানিক ২.৩০ থেকে ৩.০০ টার সময় পুলিশের গুলি ডান কাঁদের নিচ দিয়ে প্রবেশ করে বুকের মধ্যে রয়ে যায়। তাঁর সাথে থাকা ছাত্র জনতা তাৎক্ষণিক একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। জানাযা ও দাফন ময়না তদন্ত ছাড়াই ২০শে জুলাই গভীর রাতে লাশ তার গ্রামের বাড়িতে পৌছানো হয়। ২১শে জুলাই শহীদের নামাযে জানাজা সামাজিকভাবে দাফন করা হয়। যেমন ছিলেন শহীদ আলমগীর ব্যক্তিগত জীবনে খুব উদার মানসিকতার অধিকারী ছিলেন শহীদ আলমগীর। ছোটবেলা থেকেই পরোপকারী ছিলেন তিনি। সবার প্রয়োজনে সাহায্যের হাত সর্বদা প্রশস্ত রাখতেন। তাঁর মামার বক্তব্যে একথা ফুটে ওঠে। তাঁর দূর সম্পর্কের মামা ফিরোজ জানান, “আলমগীর খুবই ভালো ছেলে ছিল। কেঊ কোনো সমস্যায় পড়লে সবার আগে ছুটে যেত। তার দুটি সন্তান আমার সামনে আসলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা।” তার বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যায় আন্দোলনের সময়। আহত ছাত্রদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়া, ছাত্রদের জন্য পানি নিয়ে গিয়ে পান করানো সহ নানা ভাবে আন্দোলনকারীদের সাহায্য করছিলেন শহীদ আলমগীর শেখ। অন্যের সাহায্য করতে করতেই জীবন বিলিয়ে দিলেন আর রেখে গেলেন মানবতার তরে নিজকে বিসর্জন দেয়ার নজির। যুগ যুগ ধরে তার এই আত্মত্যাগ অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে সকল মানবসেবার ব্রত নেয়া মানুষদের। পারিবারিক অবস্থা পরিবারের রোজগারের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নানামুখি সঙ্কটে পরে গেছে শহীদের পরিবার। তাঁর সর্বকনিষ্ঠ ভাই আজাদ জানান ভাইয়ের মৃত্যর পর নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সন্তানদের পড়ালেখার পুরো খরচ চালাতো বড় ভাই। ছোট দুইটি বাচ্চার প্রতিপালন নিয়ে সঙ্কায় আছেন শহীদের স্ত্রী। সন্তানদের নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই আছেন তিনি। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: আলমগীর সেখ জন্ম : ১৮-১০-১৯৮৭ পেশা : ড্রাইভার পিতার নাম : জনাব ইজহারুল হক মাতার নাম : মোছা: আলেয়া খাতুন শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই, ২০২৪ শহীদ হওয়ার স্থান : রামপুরা ঘাতক : পুলিশ আঘাতের ধরন : গুলি গুলিবিদ্ধের তারিখ : ১৯-০৭-২৪ শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময়: ১৯-০৭-২৪, বিকাল-৩.০০ সমাধিস্থল : নিজ গ্রামের বাড়ি ঠিকানা : গ্রাম: কসবা, শিলাইদহ, উপজেলা: কুমারখালী, জেলা: কুষ্টিয়া পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২। ছোট দুই সন্তানের জীবনধারণের এবং পড়াশোনার সমস্ত ব্যয় বহন করা ৩। শহীদের স্ত্রীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা