Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম

নাম: আলিফ আহমেদ সিয়াম

জন্ম তারিখ: ৩১ আগস্ট, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৭ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : এনাম মেডিকেল কলেজ

শহীদের জীবনী

২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট বাগেরহাট সদর থানার বাশবাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে কিশোর শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়াম। সে সাভার ডেইরি ফার্ম হাই স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। তার ছোট বোন ইশরাত জাহান লামহা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা-মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে সাভারের ইসলামনগর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতো তারা। একজন পাইলট হওয়ার এবং এভিয়েশন সেক্টরে যোগদানের আকাঙ্খা ছিল তার। কিন্তু ৫ আগস্ট সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত হলে তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। আলিফ খুব সাদাসিদা ও সহজ সরল প্রকৃতির ছিল। পিতামাতার খুব অনুগত ও শান্ত ছেলে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে নিজের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পরিবারের কাছে তেমন কিছু চাইত না। টিফিনের জন্য যে টাকা দেওয়া হতো সেখান থেকে অর্ধেক খরচ করে বাকী অর্ধেক টাকা মায়ের কাছে ফেরত দিতো। ছোট বোনকে পড়াশোনার বিষয়ে সাহায্য করতো, বাবার কষ্ট দেখে নিজেই সেই কাজে সাহায্য করতেন। মাকে বলতো আমি বড় হয়ে তোমাদের সকল প্রকার অভাব অনটন দূর করে দিব ইনশাল্লাহ। এলাকার মানুষের সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, এজন্য এলাকার সবাই তাকে খুব ভালবাসতো। বাসার পাশে একটা অভাবী ছেলে ছিল তাকে নিজের বাসা থেকে মা কে না বলে খাবার দিত মাঝেমধ্যেই, মা দেখে যদি রাগারাগি করেন এই ভয়ে বলত না। কারণ আলিফ নিজেও জানত তাদের অভাব অনটনের সংসার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইদের সাথেও ছিল অসাধারণ সম্পর্ক, এজন্য তিনটা জানাজার মধ্যে একটা জানাজা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। শাহাদাতের ঘটনা যেদিন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলো তখন থেকেই আলিফ কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে থাকে, পড়ালেখার প্রতি মন নাই। আলিফ বারবার টিভির সামনে যায় আর ছটফট করে। এরপর প্রথম যেদিন তিনি শুনতে পেল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইয়েরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সেদিন থেকেই সে আন্দোলনে যাওয়া শুরু করে। আলিফ ও তাঁর বাবা প্রতিদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনে যেত। আলিফের মা নিষেধ করলেও তাঁর বাবা তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং সাহস যোগাতেন। একদিন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে গিয়ে আলিফের হাতে রাবার বুলেট ও চোখে টিয়ারশেলের গ্যাস লাগে। এই অবস্থা দেখে মা কান্নাকাটি করেন এবং পরবর্তীতে আর আন্দোলনে যেতে দিচ্ছিলেন না। তখন সে তার মাকে বলে "মা, আমাকে যেতে দাও। আমি মারা গেলে, তোমার ছেলে শহীদ হয়েছে জেনে তোমার হৃদয় গর্বে ভরে যাবে।"এরপর ৫ আগস্ট ঢাকাগামী লংমার্চে কর্মসূচির ঘোষণা আসলে আলিফের মা আর তাকে ধরে রাখতে পারেননি। আলিফের বন্ধুরা আলিফদের বাসায় এলে "খুব বেশি দূরে যাবে না"-এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায় আলিফ। যাওয়ার সময় আলিফের মা একটা মুঠো ফোন দিয়ে দেন, ১১টার দিকে মায়ের সাথে আলিফের কথাও হয়। ১২টা ১০ এর দিকে ফোন দিলে আলিফ মাকে বলে মা আমরা গনভবনের দিকে যাচ্ছি, তুমি চিন্তা করো না। ইনশাল্লাহ আমার কিছু হবে না, যদি আমার কিছু হয়ও আমি শহীদ হব আর তুমি শহীদের মা হবে। মা বললেন আমি শহীদের মা হতে চাই না, তুমি এখনই বাসায় চলে আসো বাবা। তখন আলিফ বলে তুমি দোয়া কর মা, আমরা যে উদ্দেশ্যে এসেছি সেই উদ্দেশ্য যেন সফল হয় এবং বিজয়ের বেশে তোমার কাছে ফেরত আসতে পারি। আর কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়। কিছুক্ষণ পর সাভারে গুলাগুলি শুরু হলে আলিফের মা আতংকিত হয়ে পড়েন। ২ টা ৩০ এর দিকে আলিফের মায়ের কাছে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে যে আলিফের মাথায় গুলি লেগেছে। ল্যাবজন হাসপাতালে আলিফকে নেওয়া হয়, সেখান থেকে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। এনাম মেডিকেলে আইসিইউ সাপোর্টে রাখা হয়। টানা দুই দিন যমে মানুষে লড়াই চলে। অতপর ৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় মারা যায় আলিফ আহমেদ সিয়াম। পান করে শাহাদাতের অমিয় সুধা। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। শহীদ সম্পর্কে তার স্বজনের বক্তব্য আসসালামু আলাইকুম, আমি আলিফ আহমেদ সিয়ামের আম্মু। আমার ছেলে আলিফ আহমেদ ডেইরি ফার্ম স্কুলের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ছিল। আমি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে পারি না তবুও আমার বাবার বাস্তব জীবন নিয়ে আজ কিছু কথা বলবো। আমার বাবার সাহসিকতা ছিল বীরের মতো। আমার বাবার বীরের মতো সাহসিকতার গল্পটা আমাকে আজ বলতেই হবে। আমি ৫২র ভাষা আন্দোলন দেখি নাই, দেখি নাই ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু আমি দেখেছি ২০২৪ জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলন। আমি দেখেদি আবু সাইদ, মুগ্ধ, শ্রাবণ ও আলিফের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। আমি দেখেছি তাদের মনে দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা, দেশের জন্য জীবন দেওয়ার অসীম সাহসিকতা। আমি চাই আমার ছেলে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমার ছেলের অনেক স্বপ্ন ছিল এবং তা মুহূর্তের মধ্যে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমি তার হত্যার বিচার দাবি করছি। সিয়ামের বাবা, বুলবুল কবির, যিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি কাপড়ের দোকান চালান, তিনি বলেন, "সিয়াম তার স্কুলে মেধাবী ছাত্র এবং স্পোর্টস চ্যাম্পিয়ন ছিল। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সে বিজ্ঞান গ্রুপ বেছে নিয়েছিল। সে কঠোর পরিশ্রম করেছে, অসংখ্য পুরস্কার জিতেছে। তার এইরকম সমাপ্তি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা।" বুলবুল আরও উল্লেখ করেছেন যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম তার পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজনের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেছেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ আলিফ আহমেদ সিয়াম দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তার বাবা বুলবুল আহমেদ সাভারে থাকেন। প্রথম দিকে বুলবুল আহমেদ পাচ হাজার টাকা বেতনে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে চাকুরী করতেন। অফিসটি মতিঝিলে হওয়ায় সাভার থেকে মতিঝিলের অফিসে আসা যাওয়া কষ্ট হবে বলে তিনি ভ্যানের উপর কাপড় বিক্রির ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করেন। কোভিডের সময় ক্ষুদ্র ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। জীবন জীবিকা চালানোর জন্য এরপর বিভিন্ন বাসায় আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে খাবার সরবরাহ করতেন। বর্তমানে আবার ভ্যানের উপর কাপড় বিক্রির ব্যবসাটি শুরু করেন, যাতে মাসিক আট থেকে দশ হাজার টাকা আয় করেন। এসবক্ষেত্রে আলিফ আহমেদ সিয়াম বাবাকে সাহায়তা করত। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : আলিফ আহমেদ সিয়াম জন্ম তারিখ : ৩১-০৮-২০০৯ পিতা : বুলবুল কবির মাতা : তানিয়া আহমেদ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বাশবাড়িয়া, ইউনিয়ন: ডেমা, থানা: বাগেরহাট সদর, জেলা: বাগেরহাট বর্তমান ঠিকানা : বাসা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে, ইসলামপুর থানা, সাভার, ঢাকা পেশা : ছাত্র (দশম শ্রেনী) ঘটনার স্থান : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গেট আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট দুপুর ২:১০ টা শাহাদাতের সময়কাল : ৭ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা, এনাম মেডিকেল কলেজ আইসিইউ আঘাতের ধরন : মাথায় গুলি আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : বাগেরহাট প্রস্তাবনা ১. শহীদের বাবাকে ব্যবসার জন্য পুঁজির ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম
Image of আলিফ আহমেদ সিয়াম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আবুল বাশার আদম

মো: বাবলু ফরাজী

মো: হাফেজ আনাজ বিল্লাহ

মো: হাফিজ উদ্দীন

মো: আলমগীর মোল্লা

মো: রিয়াদ শেখ

সোহান শাহ

মো: রাজু আহমেদ

মো: জামাল উদ্দীন শেখ

মুত্তাকিন বিল্লাহ

 মো: ইউসুফ শেখ

মো: তারেক রহমান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo