Image of সাকিব রায়হান

নাম: সাকিব রায়হান

জন্ম তারিখ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : চাকুরি শাহাদাতের স্থান : সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পথে

শহীদের জীবনী

২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা থানার আকাবা মসজিদ ইউনিয়নের নবপল্লী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাকিব রায়হান। জনাব শেখ আজিজুর রহমান ও নুরুন্নাহার বেগম দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান তিনি। পরিবারের সদস্য বৃদ্ধি হলে স্বাভাবিক ভাবে অর্থ কষ্ট দেখা দেয়। সংসারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পিতা আজীজুর রহমান একপ্রকার দুশ্চিন্তায় পড়েন। জীবিকার তাগিদে খুলনা ছেড়ে ঢাকায় আসেন। ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে চেষ্টা করেন রিজিক সন্ধানের। মাঝে মাঝে দিনমজুরের কাজও করতেন তিনি। কিন্তু ২০২০ সালের করোনা মহামারীতে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। কোনকিছুতেই যেন পেরে উঠছিলেন না শহীদ পিতা। এমনকি সন্তানদের লেখাপড়াও থেমে যায়। হিফজুল কোরআন অধ্যয়ন করাকালীন সাকিব রায়হানের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। শহীদ ১৮ পারা হিফজ সম্পন্ন করেন। জনাব আজিজুর রহমান নিজ এলাকায় ফিতে যান। একটি মুদির দোকান দিয়ে চেষ্টা করেন পরিবারের খরচ বহনের। নামমাত্র উপার্জন দিয়েই বড় মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করেন। মেজ ছেলে সাব্বির রায়হান বর্তমানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি। শহীদ পিতা গ্রামে ফিরে গেলেও সংসারের হাল ধরতে সাকিব চাকরি শুরু করেছিলেন। প্রথমে রবি সিমকার্ড বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে (এসআর) কাজ শুরু করেন। এরপর বাংলালিংক কোম্পানিতে যুক্ত হন। তবে কিছুদিন পর দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হলে তিনদিন অনুপ¯ি’ত থাকায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় শহীদ সাকিব রায়হানকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থায় সল্পমেয়াদী চুক্তিভিত্তিক কাজের পাশাপাশি নতুন চাকরির সন্ধান করতে থাকেন। কিছুদিন পর অর্থনৈতিক শুমারির মাঠকর্মী হিসেবে যুক্ত হন। ১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে নতুন চাকরিতে যোগদানের কথা ছিল শহীদের। মা-বাবা বারবার খুলনায় ফিরে আসতে বলেছিলেন। তিনি বলতেন-‘খুলনায় কিছু করার সুযোগ কম। ঢাকায় চাকরি অথবা ব্যবসা করে তোমাদের মুখে হাসি ফোটাব, এরপর ফিরব ইনশাআল্লাহ্। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট সরকারী বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকার পুলিশ ও আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দিলে আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠে। ১৬ জুলাই সারা দেশে ৬ জন নিহত হয়। দিনে দিনে লাশের সারি বাড়তে থাকে। ১৭ তারিখ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলায় শিক্ষার্থীরা হলছাড়া হলে ১৮ তারিখ আন্দোলনের নেত...ত্ব নেয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এদিন পুলিশ র‌্যাব হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। ১৯ তারিখ জুমার নামাজে পর আপামর ছাত্রজনতা রাস্তায় বেরিয়ে আসলে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের গুন্ডারা। জুলাইয়ের ১৫ তারিখ থেকেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন সাকিব রায়হান। ১৭ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুলিশ ও শেখ হাসিনার গুন্ডাবাহিনীর হামলায় রক্তাক্ত হলে ছাত্রদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর রক্তাক্ত লোগো প্রোফাইল পিকচার হিসেবে সংযুক্ত করেন সাকিব রায়হান। যা এখনও বিদ্যমান। বন্ধুদের সাথে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেতেন তিনি। বাড়ি থেকে বার বার আন্দোলনে যেতে নিষেধ করতো তার পরিবার। অবশেষে ১৯ তারিখ বিকাল তিনটায় মিরপুর ১০ নাম্বারে ছাত্রজনতার মিছিলে পুলিশ হামলা চালালে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে লুটিয়ে পড়েন সাকিব। পুলিশের ছোড়া তপ্ত বুলেট তার বুক ভেদ করে পিঠ ফুড়ে বেরিয়ে যায়। ছাত্ররা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে গাড়িতে মৃত্যুবরন করেন শহীদ সাকিব রায়হান। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। তাঁর বড় ভাই খবর পেয়ে হাসপাতালে যায়। পুলিশ লাশ ফেরত দিতে নয়-ছয় করে। তারা বলে এটা পুলিশ কেস, মামলা করতে হবে। অনেক সময় লাগবে। পরে এসে লাশ নিয়ে যাবেন। অনেক কান্নাকাটির মাধ্যমে করজোড়ে অনুরোধ করলে পরবর্তীতে মর্গ থেকে লাশ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় পুলিশ। জানিয়ে দেয়- ‘কোন মৃত্যুসনদ দেওয়া হবে না।’ পরদিন ২০ জুলাই প্রভাতে বড়ভাই সাব্বির রায়হান অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ নিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যায়। জানাজা শেষে বসুপাড়া কবরস্থানে শহীদ সাকিব রায়হানকে দাফন করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি পাশে থাকা সাথীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমার শাহাদাতের মাধ্যমে কি দেশে স্বাধীনতা আসবে?’ তার সাথীরা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ’। এরপর তিনি পানি পান করেন এবং কালিমা পড়েন। নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য সাকিবের মা নুরুন্নাহার বেগম জানায়- ‘বিকেল পাঁচটার দিকে কেউ একজন সাকিবের বাবার মুঠোফোন নম্বরে ফোন করে বলেন, সাকিব গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাঁকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কথা শুনেই তিনি ভেঙ্গে পড়েন। প্রথম দিকে কোথায় কী করবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না। পরে ঢাকায় থাকা বড় ছেলে ও জামাতাকে ফোন করে ঘটনাটি জানান। তাঁরাই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে খোঁজ করে সাকিবের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমার ছেলে দুই ঘণ্টার মতো বেঁচে ছিল। তাকে দুটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু‘ তারা ভর্তি করেনি। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাকিব মারা যায়। নিজেকে কী বলে সান্তনা দেব, ভেবে পাচ্ছিনা। জোয়ান ছাওয়ালডারে এইভাবে কবর দিতে হবে, ভাবতেও পারিনি। আমার ছাওয়াল গেছে, আমি বুঝতেছি কী কষ্ট! এখন ছাওয়ালের জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’ ‘গত বুধবারও ফোন করেছিল। কত কথা বলল। এখন আমার সাকিব চলে গেছে, এখন এসব বলে কী হবে? আমাদের কিছু বলার নেই। মরদেহ ফেরত পাইছি, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। কত মা তো তাও পায়নাই।’ শহীদ পিতা জনাব আজিজুর রহমান বলেন, ‘গত শুক্রবার আমরা দু’জন ঢাকায় ছেলেদের কাছে গিয়েছিলাম। আসার সময় বারবার সাকিবকে বললাম, আমাদের সঙ্গে খুলনায় চল।’ আমার ছেলে বলেছিল- ‘১ আগস্ট থেকে নতুন চাকরিতে যোগ দেব। চাকরি করে তোমাদের মুখে হাসি ফোটাব।’ কিন্তু‘ আমাদের সব হাসি যে কেড়ে নিল-এটা কাকে বলবো। কিছু বললেই আমার ছেলে হাসতো। ওর হাসিতে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যেত। ‘কারও কাছে বিচার চাই না। বিচার আল্লাহপাক করবে।’ জনয়িতার কথার সত্যতা পাওয়া গেল বায়তুল আকাবা মসজিদের সামনে গিয়ে। জোহরের নামাজ শেষে কথা হচ্ছিলো কয়েকজন মুসল্লিদের সঙ্গে। সবাই একবাক্যেই বললেন, এমন ভদ্র ছেলে এলাকায় কমই ছিল। এলাকার প্রিয় মুখটির লাশ হয়ে ফিরে আসা দেখে সবার মুখে ক্ষোভ ও হতাশা ঝরে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা সাকিবের বাড়ি খুলনা নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লী এলাকায়। সেখানকার বায়তুল আকাবা জামে মসজিদের সামনে টিনের চাল ও বেড়ায় জীর্ণশীর্ণ এক কক্ষের একটি বাড়িতে থাকেন সাকিবের বাবা-মা। বাড়িতে প্রবেশের পথটিও বেশ জীর্ণ। রান্নাঘরটি গোলপাতা দিয়ে ছাওয়া। ওই জায়গাটুকু নুরুন্নাহার তাঁর পৈত্রিকসূত্রে পেয়েছেন। সেখানেই ঘর করে কোনোরকমে থাকছেন। বাবা শেখ মো: আজিজুর রহমানের কাপড়ের ব্যবসা ছিল। করোনার সময় ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পর একটি মুদি দোকান দিয়েছেন। মা নুরুন্নাহার বেগম গৃহিণী। তার বড় ছেলে সাব্বির রায়হান ঢাকায় অনলাইনে ছোটখাটো ব্যবসা করেন। তাদের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন সাকিব রায়হান। সাকিব রাজধানীর রূপনগর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। বাসায় মাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। নুরুন্নাহার বেগমও ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ঘাতকের গুলি সবকিছু মুহূর্তে বিলীন করে দিয়েছে। বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে শহীদ পিতা-মাতাকে। একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : সাকিব রায়হান জন্ম তারিখ : ১৪-০৯-২০০৪ পিতা : শেখ আজিজুর রহমান (ভুলন) মাতা : নুরুন্নাহার বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নবপল্লী, ইউনিয়ন: আকাবা মসজিদ, থানা: সোনাডাঙ্গা, জেলা: খুলনা পেশা : চাকুরি ঘটনার স্থান : মিরপুর ১০ আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৩টা শাহাদাতের সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫ টায় হাসপাতালে নেয়ার পথে আঘাতের ধরন : বুকে গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : বসুপাড়া সরকারী কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. শহীদের ভাইয়ের জন্য চাকরীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে ২. গ্রামের বাড়িতে বাবা মায়ের জন্য একটি স্থায়ী ঘর করে দেওয়া যেতে পারে ৩. শহীদের পিতাকে ব্যবসার জন্য পুজির ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সাকিব রায়হান
Image of সাকিব রায়হান
Image of সাকিব রায়হান
Image of সাকিব রায়হান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিন

মো: মাহফুজুর রহমান

সামিউর রহমান সাদ

মো: রুহান ইসলাম

মো: হাফিজ উদ্দীন

মো: মেহেদী হাসান রাব্বি

মেহেদী হাসান আলিফ

মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির

 মো: সাওয়ান্ত মেহতাব

মো: রিয়াদ শেখ

আবদুল্লাহ

মো: আহাদ আলী

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo