জন্ম তারিখ: ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : রিক্সা চালক শাহাদাতের স্থান: বাড্ডা তেতুল তলা
শহীদ পরিচিতি ভোলা জেলার সন্তান মো: ইমন ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুযারি ভোলা জেলার আলী নগর ইউনিয়নের সাচিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশাগত কারণে ছিলেন ঢাকায়। পিতা পুত্র মিলে সংসারের হাল ধরেন। তার পিতার নাম নান্টু (এন আই ডি মোতাবেক, কিন্ত জন্ম সনদে লেখা মো: সালাউদ্দিন) দুই নামেই ইমনের বাবা পরিচিত। একটি তার ডাক নাম, আর অন্যটি নথিপত্রে ব্যবহৃত নাম। আমরা সরাসরি ইমনের মায়ের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। ইমনের শাহাদাত যাত্রা প্রতিদিনের মতো ২০ জুলাই মো: ইমন রিক্সা নিয়ে বের হন রাস্তায়। ২০ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশ ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। জুলাই মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে বিপ্লবের মাস। শেখ হাসিনা সরকার ভোট জালিয়াতি, দূর্নীতি, অনিয়মে দেশের মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলে। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়। যারা কথা বলে রোধ করে তাদের কণ্ঠ। হত্যা নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, মামলায় কোনঠাসা করে রাখে প্রতিপক্ষকে। ইতিপূর্বে হয়েছে অনেক আন্দোলন। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে জেগে ওঠেছিল ছাত্ররা। কোটা আন্দোলনেও তারা সোচ্চার ছিল। কোটা আন্দোলন আবার সরব হয়। ছাত্ররা কোটা সংস্কারে সোচ্চার হয়। প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলন দমনে সরকার ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে তাদের দলীয় ক্যাডার বাহিনী। আওয়ামী গুন্ডা বাহিনী নির্মম নির্যাতন করে নিরীহ জনতাকে। জুলাই বিপ্লবেও কঠোর হস্তে দমন নীতি প্রয়োগ করে। ছাত্ররা দমে যায়নি। ছাত্ররা তাদের যৌক্তিক দাবীর সপক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যায়। ভার্সিটির প্রতিটি হলে হলে সংঘবদ্ধ হতে থাকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র সমাজ। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনও বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাজপথে ছাত্র ছাত্রীদের বেধড়ক মারপিট করে। ১৩/১৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন একটি স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল। ইতোমধ্যে যে কেউ যে কোন কথা বললেই তাদেরকে পরিকল্পিত কোনো ট্যাগ দিয়ে সংকুচিত করে রাখতো। সত্য কথা, যৌক্তিক আন্দোলনকে নানা ট্যাগে আবদ্ধ করে রাখতে সক্ষম ছিল সরকার। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনেও পূর্বের কৌশল প্রয়োগ করে। ছাত্ররা যখন নিজেদের যৌক্তিক দাবী নিয়ে আন্দোলন মুখর তখন শেখ হাসিনা ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা বা নাতি-পুতি বলে গালি দেয়। মুহূর্তে ফেটে পড়ে ছাত্র সমাজ। আন্দোলনের আতুড়ঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্নি গর্ভ হয়ে যায়। দেশের পেটে যে অগ্নি মিটিমিটি জ্বলছিল তা আগ্নেয়গিরির রূপে দৃশ্যমান হয়। সাহসী বুক চিৎকার দিতে শিখে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফার্মের মুরগী বলে ক্ষ্যাপানো হত। তারাও জুলাই বিপ্লবে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সর্বস্তরে। ছড়িয়েছে সর্ব মহলে। হাসিনার কথা ছাত্রছাত্রীরা স্লোগানে স্লোগানে ফেরত দেয়। সকল ক্যাম্পাসে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার! স্বৈরাচার! আওয়ামী পেটুয়া বাহিনী আহত করে ছাত্রদের। নিমর্ম নির্যাতন করে ছাত্রীদের। রাস্তায় নেমে আসে অভিভাবক, ছাত্রদের পাশে দাঁড়ায় শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবী সমাজ। সরকারের পুলিশ গুলি করে, র্যাব গুলি করে। যুবলীগ গুলি করে। রাজপথে পড়ে থাকে একের পর এক লাশ। সরকার আন্দোলন দমন করতে জারি করে কার্ফিউ। বিজিবি, পুলিশ সতর্ক প্রহরায়। আন্দোলনকারীরাও জান বাজি রেখে মুখোমুখি অবস্থান নেয় রাজপথে। দেশ উত্তপ্ত। রাজপথ উত্তপ্ত। মো: ইমন একজন রিক্সা চালক। তার বাবাও রিক্সা চালক। পেটতো আর কোনো বাঁধা মানে না। ২০ জুলাই থমথমে অবস্থা। রুটি রুজির তাগাদায় ইমন রাস্তায় নেমে পড়েন রিক্সা নিয়ে। আগের দুই দিন স্বৈরাচারী হাসিনার পুলিশ ও যুবলীগ অসংখ্য মানুষ খুন করে। এদিন ছাত্র জনতা জীবনের মায়া ত্যাগ করেই আন্দোলন চালিয়ে যায়। ইমন তার জীবন যুদ্ধে সচল রাখে রিক্সা। রিক্সা নিয়ে বাড্ডা তেতুল তলায় আসে। অতর্কিতে আক্রমণ করা হয় মিছিলে। নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ অসংখ্য গুলি। একটি গুলি আঘাত করে ইমনের মাথার বাম পাশে। ২০ জুলাই সময় তখন ৩:৩০ মিনিট প্রায়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন ২১ জুলাই সকাল ৯ টায় জানাজা শেষে তাকে কবর দেওয়া হয় ভোলার নিজ গ্রামে স্থানীয় কবরস্থানে। নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীর অনুভূতি তার ভাই রাজিব বলেন, ইমন খুব ভালো মানুষ ছিল। কারও সাথে সে কোনো রকম বাকবিতন্ডায় জড়াতো না। মা বাবার কথা মতো চলতো। আমার ভাই কাজের মানুষ। আমরা গরীব মানুষ। আমরা কার কাছে বিচার চাইব? আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। প্রতিবেশী আরজত মিয়া বলেন ইমনকে কখনও কারও সাথে ঝগড়া করতে দেখিনি। সে খুব সহজ সরল ছিল। ছোট ছেলে। এই বয়সে পরিবারের প্রতি ছিল দায়িত্বশীল। তার মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। প্রস্তাবনা পরিবারটি মূলত দরিদ্র। তাদের এককালীন একটি বড় অনুদান দেওয়া যেতে পারে। বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। তার বাবাকে একটি ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। এক নজর শহীদের তথ্য নাম : মো: ইমন জন্ম : ১১-০২-২০১০ পিতা : মো: সালাউদ্দিন ওরফে নান্টু মাতা : কুলসুম বেগম ভাই-বোন : ৩ ভাই, ১ বোন পেশা : রিক্সা চালক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: সাচিয়া, ইউনিয়ন আলী নগর, ভোলা সদর, ভোলা বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ২৯৫, স্বাধীনতা,স্মরণী, জামতলা রোড, বাড্ডা ঢাকা আহতের সময় : ২০ জুলাই ২০২৪, বিকাল: ৩.৩০ শাহাদাতের সময় : ২০ জুলাই ২০২৪, (বাড্ডা তেতুল তলা) কবর : নিজ এলাকায়