জন্ম তারিখ: ৯ আগস্ট, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৩ অক্টোবর, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা :ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা।
চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদ (২২)। গত ২ আগস্ট নগরের নিউমার্কেটে আন্দোলনের ছবি প্রোফাইলে দিয়ে লিখেছিলেন, ‘আসছে ফাগুন দ্বিগুণ নয়, ১৬ কোটি হবো।’ এটাই ছিল কাউসারের ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস। দুদিন পর সেই নিউমার্কেটে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। ৭০ দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকার পর দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন কাউসার। ১৩ অক্টোবর রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাউসার মাহমুদ মারা যান। কাওসার মাহমুদের দুই ভাই ও এক বোন। বাবা আবদুল মোতালেব ব্যবসায়ী। কাউসারের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নে। আব্দুল মোতালেব নগরের চট্টগ্রাম কর্মাস কলেজ রোডে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে থাকেন। মোগলটুলীতে তার মুদির দোকান রয়েছে। নিউমার্কেটে কি ঘটেছিলো ৪ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের একদিন আগে ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম হয়ে উঠেছিল অগ্নিগর্ভ। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনগুলোর সশস্ত্র হামলায় আহত হন দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা। যাদের অধিকাংশ ছিলেন গুলিবিদ্ধ। পূর্বে ঘোষণা অনুযায়ী ৪ আগস্ট সকাল ১০টার আগেই নগরের নিউ মার্কেট এলাকায় অবস্থান নেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সিটি কলেজ এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশ ধ্বংসকারী সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর আন্দোলনকারীরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে কদমতলী, কোতোয়ালি ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের আশপাশে অবস্থান নিলে স্বৈরাচারী সরকারের বিতর্কিত পুলিশ বাহিনী তাদের ওপর গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে পুলিশের হামলা থেকে বাঁচতে তিনটি সড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় অধিকাংশ আন্দোলনকারী আহত হন। ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অত্যাধুনিক একে-৪৭, শটগান, পিস্তল, লংরেঞ্জ রাইফেল, চাইনিজ কুড়াল, রাম-দাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানো হয় নগরের কদমতলি, টাইগারপাস, সিআরবি, দেওয়ানহাট, এনায়েত বাজার, কাজীর দেউরী ও বহদ্দারহাটে। আন্দোলনকারীদের অনেককে ছুরিকাঘাত করা হয় প্রকাশ্যে। কি ঘটেছিলো কাউসারের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদ। নগরের নিউ মার্কেট ও দেওয়ানহাট কেন্দ্রীক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ৪ আগস্ট নিউ মার্কেটে ছাত্র-জনতার পূর্ব ঘোষিত আন্দোলনে অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলের আঘাতে মাটিতে লুঁটিয়ে পড়েন কাউসার। তখন ছাত্রলীগের বেধড়ক পিটুনিতে কিডনিতে আঘাত হয় তার। উল্লেখ্য যে, পরিবারের তথ্য মতে আগে থেকে কিডনী রোগে আক্রান্ত ছিলেন কাওসার মাহমুদ। পরদিন ৫ আগস্ট নগরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কাউসারকে। চিকিৎসকরা জানান গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত কাউসারের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। দুই সপ্তাহ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন কাউসার। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে কাউসারকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। ৭০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শাহাদাত বরণ করেন এ শিক্ষার্থী। ১৪ অক্টোবর সোমবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাউসারের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আব্দুর রহমান মাতব্বর জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মসজিদের পাশে লাশ দাফন করা হয়। নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলে গিয়েছিলেন কাউসার। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাউসার বলেছেন, ‘পুলিশের টিয়ারসেল খেয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা বাড়ি মারে। আব্বু-আম্মুকে কিছু না জানিয়ে ঘরে শুয়ে পড়ি। পরে আমার ব্যথা আর খিঁচুনি উঠে।’ পরিচিতদের বক্তব্য কাউসারের মৃত্যুর খবরে কাঁদছে বন্ধু-স্বজনরাসহ সবাই। ৯ আগস্ট ছিল কাউসারের ২২তম জন্মদিন। সেদিন ফেসবুকে জন্মদিনের কেক ও চিকিৎসাধীন কাউসারের ছবি পোস্ট করে কাউসারের ছোট ভাই সুলতান মাহমুদ লিখেন, হ্যাপি বার্থ ডে ভাইয়া। আজ দুই মাস ১০ দিন হয়ে গেলো ভালো করে কথা বলতে পারি না। তোর সঙ্গে একদিন ঝগড়া না করলে ভালো লাগে না। কিন্তু আজ কতদিন তোর সঙ্গে কথাই বলতে পারি না। শহীদ কাউসারের বন্ধু তানজিম উদ্দিন লিখেন, আমাদের ৪১ ব্যাচের কাউসার মাহমুদ আল্লাহর জিম্মায় ফিরে গেলো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমার বন্ধুকে জান্নাত নসীব করুক। ২ বছরের ভার্সিটি লাইফে তোর সঙ্গে ছোট ছোট অনেক মেমোরি, ট্যুর, ইফতার, এক্সকারসন সব জায়গায় তুই ছিলি প্রাণবন্ত। মিস করবো তোকে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা কাউসার মাহমুদ বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছিলেন তার পরিবারের বড় সন্তান। তার বাবা চট্টগ্রামের মোগলটুলি এলাকায় একটি মুদি দোকান করেন। পরিবার নিয়ে কমার্স কলেজ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাবা আবদুল মোতালেব মুদি দোকানের আয় থেকে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে পড়ালেখা করান। আবদুল মোতালেব হার্টের রোগী। তার বাড়িতে ভাইদের সাথে যৌথ ঘর আছে। নিজস্ব কোন জমি নেই। একনজরে শহীদ কাওসার মাহমুদ নাম : কাওসার মাহমুদ পেশা : ছাত্র পিতা : আবদুল মোতালেব মাতা : নুরজাহান বেগম ভাই-বোন : ১. সুলতান মাহমুদ নাঈম : ২. নাদিম মাহমুদ নাদিম, অষ্টম শ্রেণি, মদিনাতুল আউলিয়া মাদরাসা : ৩. জান্নাতুল মাওয়া নাদিরা, প্রথম শ্রেণি, মদিনাতুল আউলিয়া মাদরাসা স্থায়ী ঠিকানা : ভাটারা ইউনিয়ন, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর আহত হওয়ার তারিখ : ৪ আগস্ট, ২০২৪ নিহত হওয়ার তারিখ : ১৩ অক্টোবর, ২০২৪, রবিবার শাহাদাত বরণের স্থান : সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা আক্রমণকারী : সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ দাফন করা হয় : আব্দুর রহমান মাতব্বর জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম প্রস্তাবনা ১. এক ভাই ও এক বোনের লেখাপড়ায় সহযোগিতা করা ২. বাবাকে ব্যবসায়ে বা এককালীন সহযোগিতা করা