জন্ম তারিখ: ১৯ মে, ২০১৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : ছাত্র, কেসি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, শ্রেণি: নার্সারি শাহাদাতের স্থান: কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা
কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও জাবিরকে বাঁচাতে পারিনি। শহীদ পরিচিতি শহীদ শিশু জাবির ইব্রাহিম ২০১৮ সালের ১৯ মে সোমবার ঢাকার দক্ষিণখান থানার পশ্চিম মোল্লারটেক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কবির হোসাইন বেসরকারি মোবাইল রিটেইলার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং মাতা রোকেয়া বেগম একজন গৃহিণী। পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে শহীদের পিতা জনাব কবির হোসাইন পশ্চিম মোল্লারটেকে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত একটি ফ্লাটে বসবাস করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শহীদ জাবির সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন। শহীদ জাবিরের বড় বোন জুমাইনা কবির নেহা এবং বড় ভাই জুহায়ের মাহতাব আবদুল্লাহ উভয়ই লেখাপড়া করছেন। শহীদ জাবির কেসি মডেল স্কুল ও কলেজ-এর ইংরেজি ভার্সনের নার্সারীতে অধ্যয়নরত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শিশু জাবির শান্ত স্বভাবের ছিলেন, খেলনার জন্য কখনো কান্নাকাটি করতেন না বরং বাসায় ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে হ্যান্ড ক্রাফট ও খেলনা বানাতে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। জাবির সৎ, ধার্মিক ও নামাজী শিশু ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আর্মি অফিসার হবার স্বপ্ন দেখতেন। সামগ্রিক ঘটনার বিবরণ বৈষম্যবিরোধী তথা কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিশু জাবির শুরু থেকেই আন্দোলনে অংশ নিতে পীড়াপীড়ি করতো, বারবার বলত “আম্মু আমি আন্দোলনে যাব।” আন্দোলনের শুরু থেকেই পুলিশ বাহিনী ও স্বৈরাচারী সরকারের ক্যাডার বাহিনী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালাতে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনাগুলো জাবিরের পরিবার সহ্য করতে পারছিল না। জাবিবের মা সিদ্ধান্ত নেন পরিবারে সবাই মিলে শিক্ষার্থীদের লংমার্চে অংশ নেবেন। কিছুক্ষণ পর জানতে পারেন স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। রাস্তায় স্বৈরাচারী সরকার পতন ও স্বাধীনতার আনন্দে সবাই বিজয় মিছিল বের করে। মিছিল দেখতে জাবির এর মা শিশু জাবিরকে সঙ্গে নিতে চাননি। কিন্তু শিশু জাবির এর জেদ এর কাছে হার মেনে অনেকটা বাধ্য হয়েই জাবিরকে নিয়ে উত্তরায় জসীমউদ্দীন সড়কে মিছিল দেখতে যান। বিজয় মিছিল হচ্ছে এ খবর জানিয়ে জাবিবের মা সন্তানদের বাবাকেও ফোনে জসীমউদ্দীন সড়কে আসতে বলেন। জাবির এর বাবাও সেখানে আসেন। এক পর্যায়ে জাবিরকে নিয়ে বাসায় ফিরে যেতে চাইলে আরও কিছুক্ষণ থাকার বায়না করে সে। ঐদিন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জসীমউদ্দীন সড়কে বিজয় মিছিল দেখতে আরও গিয়েছিলেন জাবির এর চাচা আইনজীবি নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন ৫ আগস্ট বিকালে উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোড়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশও পাল্টা গুলি বর্ষণ শুরু করে।" জাবির এর মা জানান, ৪.৩০ এর সময় ৪নং সেক্টর এব বাইতুস সালাম মাদ্রাসার গেইট থেকে স্বৈরাচারী সরকারের উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ এপিবিএন অফিসের দিক থেকে তাদের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। তখন জাবিরের বাবা-মা শিশু জাবির এর হাত ধরে সামনের দিকে দৌড় দেন। দৌড়াতে গিয়ে রাস্তায় জাবির পড়ে যায়। তখনো জাবিরের হাত ধরে ছিলো ওর বাবা, দৌড়ে এসে দেখেন রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থার পড়ে আছে জাবির। ওর উরুতে গুলি লেগেছে, রক্তে প্যান্টসহ শরীর ভেসে যাচ্ছে। রক্তাক্ত জাবিরকে কোলে করে দ্রুতই কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসক রক্ত দিতে বলেন। রক্ত জোগাড় হলেও ক্রস ম্যাচের অভাবে ৫ আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে মাত্র ৬ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন শহীদ জাবির। ৪ নং সেক্টর সংলগ্ন কবরস্থানে শহীদ জাবির ইব্রাহিমকে দাফন করা হয়। শহীদ শিশু জাবির এর গর্বিত মা- শহীদের গর্বিত মা তার আদরের কলিজার টুকরোকে হারিয়ে মর্মাহত। আল্লাহর কাছে জান্নাত লাভের জন্য দু'আ করেন। শহীদ জাবির এর মা বলেন, “ওর বাবা ওকে রক্তাক্ত অবস্থায় কোলে নিয়ে দৌড়াতে লাগলেন। পরে আমি জাবিরকে কোলে তুলে নেই। কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরেও জাবিরকে বাঁচাতে পারিনি।” ব্যক্তিগত পরিচিতি নাম : জাবির ইব্রাহিম পেশা : শিক্ষার্থী জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৯ মে ২০১৮, ৬ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল: ৪.৩০ টা স্থান : উত্তরা সেক্টর-৪, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) কার্যালয় সংলগ্ন, বাইতুস সালাম মাদরাসা গেইট শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা ৬:৩০, স্থান: কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতাল দাফনের স্থান : ৪ নং সেক্টর কবরস্থান স্থায়ী ঠিকানা : রোড: ৯২, ইউনিয়ন: পশ্চিম মোল্লারটেক, থানা: দক্ষিণ খান, জেলা: ঢাকা পিতা : কবির হোসাইন মাতা : রোকেয়া বেগম বাড়ী ঘর ও সম্পদের অবস্থা : পৈতৃক সূত্রে একটি ফ্লাট বাসা ভাই-বোনের বিবরণ : ১. জুমাইনা কবির নেহা, বয়স: ১৯, পেশা: ছাত্রী, প্রতিষ্ঠান: আকিজ ফাউন্ডেশন শ্রেণি: এইচএস সি উত্তীর্ণ, সম্পর্ক: বোন : ২. জুহায়ের মাহতাব আব্দুল্লাহ, বয়স: ১২, পেশা: ছাত্র প্রতিষ্ঠান: কে সি স্কুল এন্ড কলেজ, শ্রেণি: ৫ম, সম্পর্ক : ভাই