জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৬৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। তাদের মধ্যে শহীদ মো আসলাম ছিলেন অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী এক ব্যক্তি। শহীদ মো: আসলাম ঢাকা যাত্রাবাড়ির ১৭, উত্তর কুতুবখালী এলাকায় বসবাস করতেন। তার জন্মও এই এলাকায়। দরিদ্র হলেও সমাজে তিনি নম্র, ভদ্র, সহ-সরল, নামাজি হিসেবে ছিল বেশ পরিচিতি। তার পিতা মো: আলী (মৃত) ও মাতা মোসা: মমতাজ বেগম। স্ত্রীর সাথে অনেক আগেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় শহীদ আসলামের। তিনি বৃদ্ধা মা মমতাজ বেগম (৭০), বোন শারমিন (৩৪) ও তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে যাত্রাবাড়ি উত্তর কুতুবখালীতে বসবাস করেন। তার দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো- ছেলে রিফাত হাসান (১৮) দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। তার মেয়ে মোসা: মিম আক্তার বিবাহিতা। পরিবারের সবাইকে রেখে শহীদ আসলাম চলে গেলেন দুনিয়া থেকে। পরবর্তীতে জানাজা সম্পন্ন হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত জুরাইন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়শাহাদাত বরণের ঘটনা মো: আসলাম রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি নিজ বাড়িতে খাবার প্রস্তুত করতেন এবং সেটা বিভিন্ন হোটেল, অফিস ও বাসাতে সরবরাহ করতেন। গত ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে দুপুর দুইটায় পেশাগত কারণে উত্তর কুতুবখালী এলাকায় আড়ৎ ও সিএনজি পাম্পে খাবার (ভাত-তরকারি) বিক্রি শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য বের হন। অতঃপর বাসায় পৌঁছানোর পর চারিদিকের চিৎকার চেচামেচি হট্টগোল তার কানে আসে। তার বাসার পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল অবস্থান করে। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে ছাত্র জনতার ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। সন্ত্রাসী পুলিশবাহিনী আসলাম সাহেবের বাসার গলিতে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে পুলিশ আসলাম সাহেবের বাসায় ঢুকে পড়ে। এসময় নিজ বাসার সিড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। কথা না বাড়িয়ে আসলাম সাহেবকে (৫৬) মাত্র এক হাত সামনে থেকে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিটি তার শরীরের বাম পাশের হাত ও কাঁধের সংযোগস্থল ক্ষত-বিক্ষত করে বেরিয়ে যায়। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন দেহ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়। মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। শহীদ সম্পর্কে তার ভাগ্নের অনুভূতি “আমার মামা একজন সহজ-সরল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ব্যাক্তি ছিলেন। ভাত-তরকারি বিক্রি করে তিনি সংসার চালাতেন। আমার মামা কোনো আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন না। আমি তার হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তি চাই।” বেগম মমতাজের দায়িত্ব কে নিবে শহীদ আসলাম তার ভাড়া বাসায় ৭০ বছরের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বসবাস করতেন। তার পিতা মো: আলীও জীবিত নাই। তাদের সাথে থাকতেন ৩৪ বছরের বোন শারমিন। বৃদ্ধা মায়ের কোনো ছেলে সন্তানও নেই যে, তার ভরণপোষণের খরচ বহন করবে। স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনী তাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পূর্ণ নাম : মো: আসলাম স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : ১৭, উত্তর কুতুবখালী, ইউনিয়ন: দনিয়া, থানা: যাত্রাবাড়ী, জেলা ঢাকা পেশাগত পরিচয় কর্মরত প্রতিষ্ঠান : নিজের বাড়ীতে খাবার প্রস্তুত করে বিভিন্ন হোস্টেল, অফিস সমূহে সরবরাহ করতেন পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন শহীদের বাবা : মরহুম মোহাম্মদ আলী শহীদের মা : মমতাজ বেগম শহীদের সন্তান : এক ছেলে ও এক মেয়ে, ছেলে রিফাত হাসান ৫ বছর বয়সে ১৩ বছর আগে নিখোঁজ হন মেয়ে : মোসা: মিম আক্তার, বিবাহিতা শহীদের বোন : শারমিন আক্তার (৩৪) ঘটনার স্থান : ৩/১ উত্তর কুতুবখালী, যাত্রাবাড়ী (নিজ বাসায়) আক্রমণকারী/আঘাতকারীর : খুনি হাসিনার পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল ও তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, সময়: দুপুর ২.৩০টা মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, দুপুর ৩টা, উত্তর কুতুবখালী