Image of মো: রায়হান

নাম: মো: রায়হান

জন্ম তারিখ: ৬ ডিসেম্বর, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : স্পট ডেথ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

জনাব মোজাম্মল হোসেনের পরিবারের একমাত্র প্রদ্বীপ শহীদ মো: রায়হান। শহীদ রায়হান নিম্নবিত্ত আয়ের পরিবারের সন্তান। শহীদ মোহাম্মদ রায়হান নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং নিজ গ্রামেই শৈশব কাটান। তিনি নোয়াখালীতেই জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব মোজাম্মল হোসেন মাত্র সাত বছর বয়সে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান। তিনি একটি বাসার কেয়ার টেকার হিসেবে কাজ করেন। তার মা আমেনা খাতুন একজন গৃহিণী। জনাব মোফাজ্জল হোসেনের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে শহীদ রায়হানই বড় ছেলে। শহীদ মো: রায়হান দরিদ্র পরিবারের এক সংগ্রামী যুবক। তিনি দারিদ্রতা ও প্রতিকূলতাকে মাড়িয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন দেখতেন। তার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে তার গ্রামের এক সিনিয়র পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। মো: রায়হান ঢাকা শহরে এসে গুলশান কমার্স কলেজে ভর্তি হন। তিনি তখন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পিতা মাতা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন যে, আমার ছেলে বড় হয়ে আমাদের পরিবারের দুঃখ কষ্ট লাঘব করবে। আমার ছেলে অনেক বড় মানুষ হবে। একটি ভালো চাকরির পর পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ রায়হান তার এইচএসসি ২০২৪ এর পরীক্ষাটাই শেষ করতে পারেননি। তাঁকে হায়নাদের আঘাতে জীবন দিতে হয়েছে। স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা জনাব মোজাম্মল হোসেন পরিবারের স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন। শহীদ রায়হান ছিলেন খুবই সৎ, সাহসী এবং দায়িত্বশীল যুবক। তিনি পরিবার ও স্বজনদের প্রতি ছিলেন খুবই যত্নবান ও শ্রদ্ধাশীল। তিনি সকলের কাছে বিশ্বস্ত ও ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। শাহাদাতের ঘটনার বর্ণনা জুলাই মাসে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন। ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে আন্দলোন করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনী, হেলমেট বাহিনী, যুবলীগের সন্ত্রাসীবাহিনী, আওয়ামী পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে আক্রমণ করে। ১৬ জুলাই ২০২৪ থেকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপরে এই নৃশংস আক্রমন চালায়। ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো, গলিতে ঢুকে গুলি করা, আকাশপথে হেলিকপ্টারের সাহায্য নির্মমভাবে ফায়ার করা ইত্যাদী মানবাধিকার লঙ্ঘন এর মত জঘন্যতম অপরাধ করেন। সারাদেশে অসংখ ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক, লেগুনার ড্রাইভার, বাস ড্রাইভার, কার ড্রাইভার,হকার ইত্যাদির ওপরে নির্বিচারে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, বুলেট ইত্যাদি নিক্ষেপ করে। সারাদেশে প্রায় ১ হাজার ছাত্র জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ক্রমান্বয়ে এক দফা আন্দোলনের রূপ লাভ করে অর্থাৎ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আন্দোলন। ৫ তারিখের "ঢাকা টু মার্চ" কর্মসূচি দেওয়া হয়। ঢাকা শহরসহ সারা দেশের লক্ষ কোটি জনতা রাস্তায় নেমে যায়। স্বৈরাচার হাসিনার নির্দেশে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব সহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা সেদিনও গুলি চালায়। তবে দেশ প্রেমিক নাগরিকের কাছে পরাজয় বরণ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয় হাসিনা। দুপুরে পালিয়ে গেলেও রাত পর্যন্ত ঢাকার অনেক জায়গায় পুলিশ গুলি চালায় ছাত্র-জনতার উপর। যার ফরে বিজয়ের পরেও ঝরে যায় অসংখ্য প্রাণ। এইচ এস সি পরীক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও শহীদ মো: রায়হান দুপুরের খাবার শেষে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। অবৈধ হাসিনার পুলিশ লীগ সেখানে ছাত্রজনতাকে সম্মুখ থেকে গুলি চালায়। অবৈধ খুনি হাসিনা পালালেও তার পুলিশ লীগ বাহিনী ছাত্র জনতার উপরে গুলি বর্ষণ করতেই থাকে। তিনিও সেখানেই ছাত্র জনতার কাতারে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দুপুর ৩ টা ৪৫ মিনিটে পুলিশের একটি গুলি তার মাথায় লাগে। শহীদ রায়হানকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রথমে তিনি অজ্ঞাতনামা হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। পরে তার পরিবারের এবং পরিচিতদের মাধ্যমে তার সনাক্তকরণ সম্ভব হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশীর বক্তব্য শহীদ রায়হান ছিলেন একজন সৎ, সাহসী এবং দায়িত্বশীল যুবক। তিনি সবসময় পরিবারের সবাইকে খুব ভালবাসতেন এবং তাদের প্রতি যত্নবান ছিলেন। তার পিতা-মাতা ছেলের উপর অনেক আশা রেখেছিলেন। বিশেষ করে তার লেখাপড়া শেষে চাকরির মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরার বিষয়ে কিন্তু সেই স্বপ্ন পূর্ণ হলো না ... (তোফাজ্জল হোসেন, প্রতিবেশী।) শহীদ পরিবারের বর্তমান অবস্থা শহীদ মোহাম্মদ রায়হানের পিতা একটি বাসার কেয়ার হিসেবে কাজ করেন। তার মাসিক আয় মাত্র বারো হাজার টাকা। তিনি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের নিজ গ্রামে মাত্র ২ শতক জমি আছে। যা পরিবারের একমাত্র সম্পদ। শহীদের পিতার পরিবারের দৈনন্দিন খরচ মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারপর শহীদের পিতা হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত। যা তার পরিবারকে আরো অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। এর ওপর সন্তানের বিদায় দুঃখ কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : শহীদ মো: রায়হান জন্ম তারিখ : ৬ ডিসেম্বর ২০০৭ পিতার নাম, বয়স, পেশা : মো: মোজাম্মল হোসেন (৫০) , কেয়ার টেকার মায়ের নাম, বয়স, পেশা : আমেনা খাতুন,৪১, গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : তিনজন ভাই বোন সংখ্যা : এক ভাই এক বোন ১. ছোট বোন: উর্মি আক্তার, বয়স: ১৪, পেশা: শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান: গোরাপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, শ্রেণী: সপ্তম ২. শহীদ মুহাম্মদ রায়হান, পেশা: শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান: গুলশান কমার্স কলেজ, ক্লাস: এইচএসসি পরীক্ষা চলমান স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দুর্গানগর, ইউনিয়ন: রাজগঞ্জ -৩৮৩৪, ওয়ার্ড নং- ১, থানা: নোয়াখালী সদর, জেলা: নোয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : মহল্লা: মধ্য বাড্ডা, এলাকা: বাজার রোড পাটোয়ারী, থানা: বাড্ডা, জেলা: ঢাকা ঘটনার স্থান : উত্তরা ইউনিভার্সিটি সামনে। আঘাতকারী : ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রশাসন বাহিনী আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৩:৪৫ টা নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : স্পট ডেথ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিশ্চিত করেন জানাযা : নিজ গ্রামের মসজিদে শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : নোয়াখালী নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রায়হান
Image of মো: রায়হান
Image of মো: রায়হান
Image of মো: রায়হান
Image of মো: রায়হান
Image of মো: রায়হান
Image of মো: রায়হান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ফরিদ আহম্মদ ছৈয়াল

মো: আসিফ হোসেন

মো: নিশান খান

মো: আরাফাত হোসেন আকাশ

সৈকত চন্দ্র দে

মো: সাহাদাত হোসেন

রিফাত হোসেন

 কাউছার হোসেন

মাসুম মিয়া

মো: মামুন হোসেন

হামিদুর রহমান

মো: তানভীর ছিদ্দিকী

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo