জন্ম তারিখ: ৭ ডিসেম্বর, ২০১০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : জিগাতলা, ধানমন্ডি
ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধা, বিনয়ী এবং ভদ্র স্বভাবের ছিলেন শহীদ আবদুল মোতালেব। তিনি অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্র ছিলেন। ৭ ডিসেম্বর ২০১০ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার বড় নোয়াজপুরে এক সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব মো: আবদুল মাতিন (৪৭) পেশায় ছিলেন দিনমজুর এবং তার মাতা জাহানারা বেগম (৩৭) পেশায় গৃহিণী ছিলেন। তার ছোট ভাই আব্দুল্লাহ আল মুনতাসীর (০৩) এবং তার একজন বিবাহিতা বড় বোন ছিলেন। জনাব আব্দুল মতিন তার ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করার স্বপ্ন নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে পাড়ি জমান। ঢাকায় এসে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। পেশায় দিনমজুর হওয়ার কারণে দৈনিক কাজের মাধ্যমে যে স্বল্প টাকা তিনি উপার্জন করতেন তা দিয়েই তিনি সংসার চালাতেন। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র তিনিই হওয়ার কারণে তার আয়ের উপরেই চলতো পুরো পরিবার। মায়ের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গনঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। চাকুরীক্ষেত্রে কোটা প্রথা বহাল থাকবে এমন অযৌক্তিক রায়ের বিরুদ্ধে ছাত্ররা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ছাত্ররা শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। স্বৈরাচারী সরকার তাদের ন্যায্য দাবিকে নস্যাৎ করার জন্য আওয়ামী-যুবলীগ এবং স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করেন। সতেরো জুলাইয়ের পরে ছাত্রদের উপরে আওয়ামী পুলিশ লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ দ্বারা নিরীহ ছাত্রছাত্রীর উপর বেধড়ক মারধর শুরু হয়। ছাত্রদের উপর অমানবিক নির্যাতন এবং মানবাধিকার বিরোধী আচরণের জন্য ছাত্র আন্দোলন ধীরে ধীরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অগনিত ছাত্র-জনতা শহীদ হন। শহীদ আব্দুল মোতালেবও সেই শহীদদের একজন। শহীদ আব্দুল মোতালেব বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। ৪ই আগস্ট ২০২৪ অন্যান্য দিনের মতোই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে ধানমন্ডি জিগাতলায় বন্ধু ও বড় ভাইদের সাথে বিকেল পাঁচটার দিকে মিছিলের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। একদিকে ছাত্র জনতার ন্যায্য আন্দোলন অন্যদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং পুলিশ বাহিনীর আক্রমণ। ছাত্র-জনতার ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করার জন্য সরকার তার সন্ত্রাসী বাহিনী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। তারা হেলমেট পড়ে দেশি-বিদেশী অস্ত্র হাতে নিয়ে পুলিশের সাথে আক্রমণে অংশ নেয়। স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ সর্বশক্তি নিয়ে তারা সামনে থেকে ছাত্র-জনতার উপর উপর্যুপরি গুলি করে। শুধু তাই নয় হেলিকপ্টার থেকেও সাউন্ড গ্রেনেড এবং রাবার বুলেট ছোড়া হয়। বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদের উপর থেকে স্নাইপার দিয়ে টার্গেট করে করে ছাত্র জনতার উপরে গুলি করা হয়। ভয়াবহ এক সংঘর্ষের শিকার হন শহীদ আব্দুল মোতালেব। আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং পুলিশের একযোগে সাউন্ড গ্রেনেডের মুখে পড়েন শহীদ আবদুল মোতালেব। একটা গুলি এসে তার বুকে বিদ্ধ হয়। সাথে সাথেই তিনি ঢলে পড়েন রাস্তায়। পুলিশের প্রচন্ড গোলাগুলির মুখে তার সহকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহীদ মোতালেবকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তাকে শিকদার মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে তিনি ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তার লাশ শহীদ মিনারে নিয়ে যান এবং সেখানেই তার জানাজা সম্পন্ন করেন। শহীদ আব্দুল মোতালেবকে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ আব্দুল মোতালেবের বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল তাদের ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে পরিবার এবং দেশের সেবা করবে। তার এমন আকস্মিক মৃত্যু যেন কেউই মেনে নিতে পারছিলেন না। শহীদের মৃত্যুতে তার বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীরা শোকাহত হয়ে পড়েন। শহীদের মৃত্যুতে যেন একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো। শহীদ আব্দুল মোতালেব ছিলেন সম্ভাবনাময় এক তরুণ যার প্রতিভা শুধু ফুটবলে নয় তার শিক্ষায়ও ফুটে উঠেছিল। তার মৃত্যুতে কেবল পরিবার নয় তার স্কুল, খেলার সাথীরা এবং পুরো সমাজই অপূরনীয় ক্ষতির শিকার হয়। শহীদ আব্দুল মোতালেব চিরতরে আমাদের কাছ থেকে চলে গেলেও তার আদর্শ, তার বিনয়, এবং তার সংগ্রাম আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশীর অনুভূতি শহীদ আব্দুল মোতালেবের প্রতিবেশী এক চাচা বলেন যে, “তিনি ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধাবী ছিলেন”। বড়দের সাথে দেখা হলে সালাম দিতেন এবং শ্রদ্ধা জানাতেন। তিনি অত্র আন্দোলনে সহকারীদের সাথে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। শহীদ আব্দুল মোতালেব নিয়মিত নামাজ পড়তেন। তাকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে যেন দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয় এবং তার পরিবারকে যেন আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়। (প্রতিবেশি জনাব মারুফ হোসেন মিলন)। এক নজরে শহীদের পরিবার নাম : মো: আবদুল মোতালেব, পেশা: ছাত্র জন্ম তারিখ : ৭ ডিসেম্বর ২০১০ পিতা : মো: আবদুল মতিন, পেশা: দিনমজুর মাতা : জাহানারা বেগম, পেশা: গৃহিণী আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান : ৪ আগস্ট ২০২৪, জিগাতলা, ধানমন্ডি শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ৪ আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা ৬.০০টা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বড় নোয়াজপুর, ইউনিয়ন: ৫নং ওয়ার্ড, থানা: বেগমগঞ্জ, জেলা: নোয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ৬৩/এ, থানা: হাজারীবাগ, ঢাকা পরিবারের জন্য করনীয় প্রস্তাবনা ১: তার বাবা ট্যানারি কাজের একজন দিনমজুর। তাঁকে ট্যানারি ব্যাবসার জন্য এককালীন সহায়তা করা যেতে পারে ২: নিয়মিত মাসিক সহায়তা করা যেতে পারে