জন্ম তারিখ: ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: শ্রমিক শাহাদাতের স্থান : কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি সায়েম হোসেন আলিফ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ সালে বরগুনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম কবির হোসেন টিটু এবং মায়ের নাম শিউলি আক্তার। তার বাবার শরীরের একপাশ অবশ। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিন যাপন করছেন। সায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের একজন অন্যতম শহীদ। ১৯ জুলাই শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত সংস্থা পুলিশ বাহিনী সায়েম হোসেন আলিফকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ১৯ জুলাই শুক্রবার, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের “কমপ্লিট শাটডাউন” ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল, পরিস্থিতি ছিল থমথমে। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গুলি ও সংঘর্ষে অন্তত ৪৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন জেলায় আরও ১২ জন নিহত হওয়ার খবর জানা যায়। আহত হন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ অনেকে। এদিন আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকেও অংশ নিতে দেখা যায়। মা তার সন্তানকে নিয়ে রাজপথে অবস্থান নেন। শিক্ষকেরা তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কর্মসূচীতে যোগদান করেন। মুসল্লিরা নামাজ শেষে বিপ্লবীদের পাশে যুক্ত হন। সারাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মেট্রোরেলের কাজিপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশনে আগুন দিয়ে ও ভাংচুর করে ছাত্রদের উপরে দোষ চাপায়। যদিও অতীতের কর্মকান্ড উপলব্ধি করে এটা যে চিরাচরিত আওয়ামী লীগের নিজেদেরই কাজ তা দেশবাসী বুঝতে পারে। শেখ হাসিনা আহত ও নিহত ছাত্রদের দেখতে না যেয়ে ধ্বংস হওয়া স্থাপনা দেখে মায়াকান্না করেন। অবৈধ রাষ্ট্রপ্রধানের এমন কান্ডে তীব্র ঘৃণা শুরু হয় চারিদিকে। সমস্ত পুলিশ মারাণাস্ত্র নিয়ে রাজপথে ব্যস্ত থাকার সুযোগে নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে গেট ভেঙে ৮২৬ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। লুট করা হয় অস্ত্র। সন্ধ্যায় ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে চলমান আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয়। পরে ১৪ দলের নেতারা গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ১৪ দলের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন ও কারফিউ জারির পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়, পাশাপাশি করা হয় সেনাবাহিনী মোতায়েন। এদিন দিবাগত গভীর রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আট দফা দাবি তুলে ধরেন কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক। একইসঙ্গে তারা জানান, আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। অবশ্য এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ৯ দফা দাবির কথা জানান। দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন। যেভাবে শহীদ হলেন সায়েম জ্ঞান হওয়ার পর থেকে সরকারী অব্যবস্থাপনা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেন। সরকারী দলের লুটপাট, অর্থ পাচার, গুম, খুন, বিচারহীনতা, কথা বলার অধিকার হরণ, আলেম সমাজকে হত্যা ও কারাগারে আটকে রাখা প্রভৃতি তাকে পীড়া দিত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন স্বৈরাচারী সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের মানুষের মুক্তি নেই। সায়েম হোসেন আলিফ আন্দোলনে অংশ নেন। রাজপথে নেমে আসেন। পুলিশের আক্রমণাত্মক টিয়ারশেল, ছররা গুলি, হ্যান্ডগ্রেনেড, হেলিকপ্টার থেকে আক্রমণের কারনে কদমতলী এলাকা ছিল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। ছাত্ররা অলি-গলিতে অবস্থান নেয়। আহতদের হাসপাতালে পাঠান সায়েম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে ভেবে ছাত্র-জনতা ধীরে ধীরে নিজ নিজ বাসার উদ্দেশ্যে ফেরা শুরু করে। পুলিশ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তখনো অপেক্ষায় ছিল। শেখ হাসিনা ও তার এমপিদের নির্দেশনা ছিল যত লাশ তত পুরস্কার। ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হন সায়েম। রাত আনুমানিক ৮ টার সময় মৃত্যুবরণ করেন। কেমন আছে তার পরিবার সায়েম হোসেন আলিফের বাবা প্যারালাইজড রোগী। তার দেহের একপাশ অবশ। তিনি নিয়মিত ওষুধ খান। মা গৃহিণী। সায়েম ওয়ার্কশপে কাজ করে সংসার চালাতেন। পরিবারটি এখন অনেক অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রস্তাবনা: ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. চিকিৎসার দায়িত্বভাব গ্রহণ একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : সায়েম হোসেন আলিফ পেশা : শ্রমিক জন্ম তারিখ : ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ পিতা : কবির হোসেন টিটু মাতা : শিউলি আক্তার আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : কদমতলী আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : রসুলপুর কবরস্থান, আব্দুল্লাহপুর, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : ১৪১৯ নং বাড়ি, মুরাদপুর, কুদারবাজার, কদমতলী, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : মনোষাতলি, বরগুনা সদর, বরগুনা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : বাড়িতে ঘরের জমি আছে। আবাদি জমি নেই।