জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ০০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : রিকশাচালক, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর থানার সামনে
শহীদ মতিউর রহমানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কমলাকান্তপুর গ্রামে। তিনি ঢাকার মিরপুর-২ এলাকায় সরকারি আবাসনে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। তিনি ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে চাকরি করতেন। তাঁর চাকরি স্থায়ী ছিল না। চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে ২০১৯ সালে তিনি উচ্চ আদালতে মামলাও করেছিলেন। পরে ২০২২ সালে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। এতে কর্মস্থল থেকে শূন্য হাতে ফেরেন তিনি। পরিবার চালাতে বাধ্য হয়ে তিনি রিকশা চালানো শুরু করেন। মতিউরের তিন সন্তান লেখাপড়া করে। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ ৫ আগস্ট গুলিতে মতিউর রহমান নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে বড় কন্যা নুরুন্নাহার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের দিন ঢাকার রাস্তায় সর্বস্তরের মানুষ আনন্দ-উল্লাস করছিলো। টিভিতে সেই দৃশ্য দেখে বাবাও অনেক খুশি হয়েছিলেন। দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে পাঁচ কেজি চাল কিনে বাড়ি ফিরেছিলেন। দুপুরে খাওয়ার পর টিভিতে খবর দেখছিলেন। সরকারের পতন দেখে বাবা বলেছিলেন, ‘এখন থেকে দেশে ভালো কিছু হবে। হয়তো আমার চাকরিটাও ফিরে পেতে পারি। যাই, রাস্তায় মানুষের আনন্দটা দেখে আসি।’ এই বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান বাবা। পরে বিকেলে মিরপুর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাবা লাশ হয়ে ফিরে আসেন। বাবা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কেউ ছিলেন না। কেবল মানুষের আনন্দ দেখতে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ৫ আগস্ট রাত ১২টার দিকে বাবার লাশ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পথে রওনা হন নুরুন্নাহাররা। ৬ আগস্ট ভোরে তাঁরা যখন রাজশাহীতে পৌঁছান, তখন চাচারা মুঠোফোনে কল করে বলেন, গ্রামের কবরস্থানে বাবার দাফন হবে না। কারণ, বাবা নাকি কবরস্থানের জন্য কোনো চাঁদা দেননি। পরে নানার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর মহল্লার পূর্বপাড়া কবরস্থানে বাবার লাশ দাফন করা হয় বলে জানায় নুরুন্নাহার। পারিবারিক জটিলতা কয়েক দিন পরে নুরুন্নাহার ও তার পরিবারের সদস্যরা পারিবারিক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তারা গ্রামের বাড়িতে গেলে চাচারা জানিয়ে দেন, তাদের বাড়িতে কোনো ঘরবাড়ি নেই, জমিজমা নেই। তাদের বাবা নাকি সব বিক্রি করে দিয়েছেন চাচাদের কাছে। বিক্রির দলিল দেখতে চাইলে তারা দেখাননি। নুরুন্নাহার বলেন, ঢাকায় সরকারি আবাসনে কত দিন আর থাকতে পারবেন জানেন না। তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। দুই বোন এক ভাই ঢাকায় লেখাপড়া করে। বোন দশম শ্রেণিতে ও ভাই নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর তিনি ঢাকায় নার্সিংয়ে স্নাতক শেষ করে ইন্টার্ন করছেন। তার টিউশনি, মায়ের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আরবি পড়ানো ও বাবার আয়েই সংসার চলত। বাবা ছাড়া এখন কী হবে বুঝতে পারছেন না। নিহত মতিউর রহমানের বড় ভাই এরফান আলী বলেন, ‘আমার ভাই গ্রামের কবরস্থান কমিটিকে বার্ষিক চাঁদা দিত না। কবর দিতে হলে ১০-১২ হাজার টাকা দিতে হতো। কিন্তু আমরা সেটার ব্যবস্থা করতে পারিনি। তাই এখানে লাশ নিয়ে আসতে মানা করেছিলাম।’ বাড়িঘর জমিজমা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে তাঁর একটিই ঘর ছিল। ছিল কিছু জমিজমা। সবই আমাদের দুই ভাইয়ের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমার ভাই বউ ও ভাতিজা-ভাতিজিরা আবার এলে সেই দলিল দেখাব।’ প্রস্তাবনা ১। শহীদ মতিউর রহমানের ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ ভবিষ্যতের যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করা। ২। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া। ৩। শহীদ পরিবারের জন্য স্থায়ী বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া। একনজরে শহীদ সম্পর্কিত তথ্যাবলি নাম : মতিউর রহমান পেশা : রিকশাচালক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কমলাকান্তপুর, থানা: শিবগঞ্জ, জেলা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : বাসা/মহল্লা: সরকারি আবাসন, এলাকা: মিরপুর-২, ঢাকা পরিবারের তথ্য : মেয়ে: ২, ছেলে: ১ ঘটনার স্থান : মিরপুর থানার সামনে, মিরপুর, ঢাকা আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক দুপুর ২:৩০টা আঘাতের ধরন : গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ২:৩০টা, মিরপুর থানার সামনে, মিরপুর, ঢাকা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর মহল্লার পূর্বপাড়া কবরস্থান