জন্ম তারিখ: ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: নিরাপত্তা প্রহরী, শাহাদাতের স্থান : সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল হাসপাতালে
শহীদ মো: ইসহাক জমদ্দার ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭ সালে বরগুনা জেলার বামনা উপজলোর বেবাজিয়াখালী গ্রামের একটা দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল আজিজ একজন কৃষক এবং মাতা জোবেদা খাতুন একজন গৃহিণী ছিলেন। দরিদ্রতার কারণে তিনি তাঁর পড়াশোনা বেশিদুর চালিয়ে যেতে পারেননি। অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। কর্মজীবন পেশাগত জীবনে তিনি নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে ঢাকার আদাবরে বসবাস শুরু করেন। কর্মজীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ এবং নিষ্ঠাবান একজন ব্যাক্তি ছিলেন। ইসহাক পেশায় নিরাপত্তা প্রহরী হলেও সামান্য বেতনে বাবা-মা, স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ ৬ সদস্যের বড় পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে মাঝে মাঝে তিনি দিনমজুরের কাজও করতেন। অভাবী পরিবারের হাল ধরতে তাঁর দুই ছেলে সবুজ সেলসের কাজে এবং সজীব রংমিস্ত্রির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পেশাজীবনে নিরাপত্তা প্রহরী হওয়ায় অন্যকে নিরাপত্তা দেওয়াই ছিল ইসহাকের প্রধান কাজ। সংগ্রামী আন্দোলনে অংশগ্রহণ সারাজীবন অন্যকে নিরাপত্তা দিলেও ৫ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতার দিনে নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভুলে গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন বরগুনার বীর সন্তান ইসহাক জমাদ্দার। ঐদিনই (৫ আগস্ট, ২০২৪) ছাত্রজনতার আন্দোলনের চাপে স্বৈরাচারী হাসিনা যখন পদত্যাগ করে দেশ হতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় তখন ইসহাক জমাদ্দার সেই খবর পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং বেলা ১২ টায় গণভবন অভিমুখে রওয়ানা দেন। এদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পেটুয়া বাহিনী ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালাচ্ছিল। তারা পাখির মতো মানুষ মারছিল। তারা সাইকো শেখ হাসিনার পালানোর খবর জানতেই পারেনি। পেটুয়া পুলিশ বাহিনী সাধারণ মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করেনি। ওরা স্নাইপার, রাইফেল, একে-৪৭ দিয়ে একের পর এক সাধারণ ছাত্র জনতার বুক তাক করে গুলি ছুড়তে থাকে। এমতাবস্থায় ইসহাক জমাদ্দার শ্যামলীর লিংক রোডে যখন পৌঁছান তখন নির্দয় পুলিশ বাহিনীর ছোড়া একটি বুলেট হঠাৎ তার বাম হাতের বাহু ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে, সঙ্গে সঙ্গে মুখ থুবড়ে পড়ে যান পীচঢালা শক্ত রোডে, রক্তে লাল হয়ে যায় তার শরীর। সেখানেই পড়ে ছটফট করতে থাকেন তিনি। তাৎক্ষনিক ইসহাকের সহযোদ্ধারা তাঁকে সোহরাওর্য়াদী মেডিক্যাল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করান। তখন ডাক্তাররা শুনিয়ে দেয় সেই হৃদয় বিদারক দুটি শব্দ, 'আমরা দুঃখিত' ' তিনি আর এ পৃথিবীতে নেই। বুলেটে জর্জরিত হওয়ার আগে বিকাল ৫ টায় তাঁর ছেলের সাথে মাত্র কয়েক মুর্হুত কথা বলার সুযোগ পান তিনি। দেশের জন্য চিন্তা করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবন বিসর্জন দেন। জমাদ্দারের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে তার পরিবারের উপর। দুঃখের ছায়া নেমে আসে এলাকাবাসীর মাঝে। তাঁর প্রথম জানাজা হয় ঢাকার আদাবরে এবং দ্বিতীয় জানাজা হয় তাঁর জন্মভূমি বরগুনার বামনায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্মমতার শিকার এই নিরীহ ব্যাক্তি ছিলেন তাঁর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-প্রতিবেশিদের মাঝে অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। এভাবেই ঝড়ে গলে আরেকটি তাজা প্রাণ। তিনি তার সাহসিকতার জন্য বাংলার বুকে এবং প্রতিটি বাঙালীর বুকে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। “সারা জীবন অন্যের নিরাপত্তা দিলেও নিজের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারলেন না ইসহাক” ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পুরো নাম : মো: ইসহাক জমদ্দার জন্ম তারিখ : ০৪-০২-১৯৭৭ পিতার নাম : আব্দুল আজিজ মাতার নাম : জোবেদা খাতুন পেশা : নিরাপত্তা প্রহরী পরিবারের সদস্য : ৬ জন মাসিক আয় : ২০,০০০ টাকা ছেলে-মেয়ের সংখ্যা : দুই ছেলে প্রথম ছেলে : সবুজ, পেশা: সেলস ওয়ার্কার দ্বিতীয় ছেলে : সজীব, পেশা: রংমিস্ত্রি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বেবাজিয়াখালী, ইউনিয়ন: বামনা সদর, উপজেলা: বামনা, জেলা: বরগুনা বর্তমান ঠিকানা : উত্তর আদাবর ২৩ নং হোল্ডিং থানা : আদাবর, জেলা-ঢাকা আঘাতকারী : সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর গুলিতে আঘাত পাওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৫টা নিহত হওয়ার সময় ও স্থান : সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল হাসপাতালে, গুলি লাগার কয়েক ঘন্টার মধ্যে শহীদের কবর : নিজ গ্রামে, বরগুনার বামনায়