জন্ম তারিখ: ১৪ মে, ১৯৬৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : মৌসুমী ফল বিক্রেতা (হকার), শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
’’যে হকারের নীরব দাঁড়িয়ে থাকাও রাষ্ট্রের গুলির লক্ষ্য হয়ে ওঠে’’ তার নাম ছিল মো: মনিরুল ইসলাম অপু। কোনো শিরোপা নেই, কোনো উপাধি নেই, তবু ইতিহাসের রুক্ষ পৃষ্ঠায় তার নাম আজ আগুন দিয়ে লেখা। জন্মেছিলেন চাঁদপুরে, এক নাম না-জানা গ্রামে; পিতা ফজল বেপারী, যিনি তিলে তিলে গড়েছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসার ভাঙাচোরা ভিত, আর মা শহরবানু, যিনি জীবনের সব ক্লান্তি ঢেকে রাখতেন একটা শাড়ির আঁচলে। অপু ছিলেন সেই শ্রেণির প্রতিনিধি, যাদের ইতিহাসে কোনো পাতার বরাদ্দ থাকে না। যাদের ঘর নেই, জমি নেই, ভবিষ্যৎ নেই শুধু থাকে কাঁধে একটা ঝাঁপি, হাতে কিছু মৌসুমি ফল আর চোখে একরাশ অব্যক্ত প্রতীক্ষা। ঢাকার নবাবপুর এলাকায় যারা কখনও হেঁটেছেন, তারা সবাই একবার না একবার অপুকে দেখেছেন ফুটপাথে দাঁড়িয়ে, মাথায় ঘামে ভেজা গামছা, কণ্ঠে হালকা ডাকে “আম...জাম...লিচু নেন ভাই...”। সেই ডাকের ভেতর কোনো বিপ্লব ছিল না, ছিল না রাষ্ট্র বদলের ঘোষণা, কিন্তু ছিল মানুষের প্রতি এক অনাড়ম্বর ভালোবাসা। এ ভালোবাসা ছিল জীবনের প্রতি, সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিদিন রোদে পোড়ার এক মৃদু প্রতিজ্ঞা। অপু ছিলেন রাজনীতির বাইরে, কিন্তু অন্যায়ের বিপরীতে। বুলেট ছুঁড়ে মারলে কেউ জানতে চায় না আপনি কোন দলের, কোন পেশার, কোথা থেকে এসেছেন। তারা শুধু দেখে, আপনি দাঁড়িয়েছেন কিনা। অপু দাঁড়িয়েছিলেন সেই জুলাই বিপ্লবের দিনে, যখন মেঘের নিচে মাথা উঁচু করে উঠেছিল এক নতুন প্রজন্ম। যখন তরুণেরা বলেছিল, “এই দেশ আর একতরফা শাসন মানে না।” অপু কোনো স্লোগান দেননি, কোনো পতাকা তোলেননি, কিন্তু তিনি ছিলেন রাস্তায় সবার পাশে, একটি জাতির হৃদয়ে। সেই দিন অপু দাঁড়িয়েছিলেন গলির মোড়ে। তাঁর চোখে ছিল প্রশ্ন “এই আন্দোলনের পরে কী হবে?” তিনি উত্তর পাননি। পেয়েছেন শুধু একটুখানি শব্দ ঠাস! রাষ্ট্রের বুলেট তার বুকে ঢুকেছে, যেন বলেছে, “তোমার প্রশ্ন করার অধিকার নেই।” এভাবে হারিয়ে যায় ইতিহাসের এক নীরব প্রতীক। অপু মারা যান, ঠিক যেভাবে ধীরে ধীরে মারা যায় একটি জাতির বিবেক। একজন হকারের মৃত্যুতে কেউ সংসদে দাঁড়িয়ে শোকপ্রস্তাব রাখে না, টিভিতে আসে না তিরিশ সেকেন্ডের ব্রেকিং নিউজ। তবু অপু রয়ে যান শহরের বাতাসে, মানুষের হাঁটাচলায়, ফুটপাথে পড়ে থাকা আমের একটা ছোবলে। তিনি শুধু পরিবার হারাননি, আমরা হারিয়েছি আমাদের সমাজের সবচেয়ে নির্মল অংশ একজন ভালো মানুষ, যে নিঃস্ব থেকেও প্রতিদিন বাঁচার শিক্ষা দিত। বড় ছেলে শাওন বেকার, ছোট ছেলে মুন্না আগেই চলে গেছে, স্ত্রী আমেনা বেগম রোজ ভোরে রান্না করতে গিয়ে এখন কাঁদেন। কারণ যার ঘামে ভাত জুটত, সে আজ রক্তে ভেসে গেছে। এই অপু যিনি কোনো বাহিনীর সদস্য নন, কোনো ইউনিফর্মে বাঁধা ছিলেন না, তবু হয়েছেন একজন শহীদ। কারণ একটি রাষ্ট্র তাঁকে হত্যা করেছে যখন তিনি একটি প্রশ্ন করছিলেন। এখন এই প্রশ্ন আমাদের এই দেশ কার? আর কত অপু মরবে প্রতিটি উত্তরের আগে যদি লেগে থাকে একটি বুলেট? জুলাই বিপ্লব শুধু রাজনীতির পট পরিবর্তন নয়, এটি অপুর মতো নামহীনদের মুখে ইতিহাসের ভাষা তুলে দেওয়ার বিদ্রোহ। তাঁদের কথা যতদিন আমরা বলি, ততদিন বিপ্লব বেঁচে থাকে। আর একদিন, কেউ হয়তো বলবে “এক হকার, এক পিতা, এক শহীদ তাঁর নাম অপু ছিল এক জাতির মেরুদণ্ড।” আন্দোলনের প্রেক্ষাপট জুলাই ২০২৪। বর্ষাকালের বুক ফাটা আকাশের নিচে হঠাৎ করেই গর্জে ওঠে এক নিঃস্ব প্রজন্মের স্বর এ এক রক্তমাখা অধ্যায়, যেখানে প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটায় ভেসে আসে শ্লোগানের প্রতিধ্বনি। কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আন্দোলন হঠাৎই হয়ে উঠেছিল একটি জাতির আত্মপরিচয়ের জন্য সংগ্রাম। ছয় বছর আগের প্রতিশ্রুতিকে ছিঁড়ে ফেলে শাসকগোষ্ঠী ফের কোটা ফিরিয়ে আনার ফন্দি আঁটে ২০১৮ সালের সেই বিদ্রোহ, যার আগুনে একবার ছারখার হয়েছিল মোহ, এবার তা উঠে আসে নতুন রূপে, নব যন্ত্রণা আর আরও বৃহৎ এক প্রত্যয় নিয়ে। এইবার শুধু কোটা নয়, এইবার প্রতিবাদ চলছিল সত্যিকারের সমতা, গণতন্ত্র, আর মানুষের মৌলিক অধিকারের দাবিতে। তরুণেরা বুঝে গিয়েছিল এ লড়াই রাজনৈতিক সংস্কারের নয়, এটি অস্তিত্বের। ১ জুলাই শুরু হয় বিক্ষোভ এবং অচিরেই তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি শহর, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিটি মোড়ে। দিনে দিনে এই আন্দোলন হয়ে ওঠে এক চলমান বিপ্লব, যার পেছনে ছিল ক্ষোভ, স্বপ্ন এবং সবচেয়ে বড় কথা আবেগহীন শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রাণের দাবী। কিন্তু ১৫ জুলাইয়ের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রাজপথে নামে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের এক যৌথ আক্রমণ। আন্দোলন রক্তাক্ত হয়। এখন আর কেবল পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা নয়, এবার গুলির আওয়াজ, এবার শরীর ভেদ করে যায় ধাতুর সুর। ঢাকার বুকে তখন শব্দ করে কাঁদছিল ফুটপাথ, ভবনের কাঁচ, মায়েদের বুক। ৫ আগস্ট দুপুর হতে রাত, যখন নবাবপুর, মতিঝিল, বংশাল সব জায়গায় জনতার ঢল, আনন্দ-সংঘর্ষের জটিল অধ্যায় রচিত হচ্ছিল, তখন সেখানে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোঃ মনিরুল ইসলাম অপু। তিনি ছিলেন না কোনো রাজনৈতিক কর্মী, ছিলেন না মিছিলের প্রথম সারিতে। ছিলেন এক মৌসুমী ফল বিক্রেতা, যার কাছে দেশ মানে ছিল দুপুরের রোদে ফল বিক্রি করে রাতের খাবারের টাকা জোগাড় করা। সেদিনও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন গলির মুখে হাত খালি, চোখে একটি প্রশ্ন: “কি হবে এই আন্দোলনের পর দুপুরেই স্বৈরাচার পালায়, কিন্তু তার দোসর, পুলিশ, তারা পালাতে পারেনা, গুলি চালাতে থাকে পেছন ফিরে তাকানোর আগেই। দুপুরে জনতা আনন্দে গর্জে উঠেছিল, চারপাশে শ্লোগান, বাঁশি, খইয়ের মতো কথার ফুলঝুরি কিন্তু অন্যদিকে চলছিল সারাদিন ব্যাপী সংঘর্ষ। ঠিক এই দ্বৈত বাস্তবতার মাঝখানে অপু দাঁড়িয়ে ছিলেন, না আনন্দের অংশ, না সংঘর্ষের। তিনি ছিলেন নীরব সাক্ষী কিন্তু এই সরকারের চোখে নীরবতা মানেই ষড়যন্ত্র, সাধারণতা মানেই হুমকি। তাই সেই নীরবতাকেই রক্তাক্ত করে ফেলে এক সরকারী বুলেট। অপুর পাজরে লাগে গুলি না কোনো প্রতিরোধ, না কোনো শব্দ, কেবল একটা ভারী দেহ, ধপ করে পড়ে থাকে ফুটপাতে। তার রক্ত মিশে যায় ঢাকা শহরের ধুলোয়। কোনো সংবাদপত্রের শিরোনাম হয় না, কোনো নেতা টুইট করে না তার নাম নিয়ে তবু তার মৃত্যু হয়ে থাকে এক রাষ্ট্রীয় পাপের নির্ভুল সাক্ষ্য। এই আন্দোলনের ইতিহাস লিখবে যারা, তাদের হাতে যদি থাকে ন্যায়ের কলম, তবে সেখানে অপুর নাম থাকবে। কারণ শহীদ শুধু সেই নয় যে পতাকাধারী শহীদ সেই, যার রক্তে পতাকা ভিজে ওঠে। শহীদ হওয়ার করুণ কাহিনি রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। নবাবপুরের গলির মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোঃ মনিরুল ইসলাম অপু শরীরে ক্লান্তি, চোখে উদ্বেগ, মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা। আশেপাশে তখন আর যাই থাক, নৈঃশব্দ্য ছিল না, ছিল পুলিশের লাঠি ঠোকানোর শব্দ, বুটের ধাপ, আর বন্দুক তাক করার নির্মম প্রস্তুতি। রাতের আঁধারে, সেই যে এক মুহূর্ত কোনো সিনেমাটিক সতর্কতা ছিল না, কোনো যুদ্ধের ঘন্টা বাজেনি শুধু হঠাৎ এক গুলি এসে বিধে যায় তাঁর পাঁজরে। শরীরটা একটু দুলে পড়ে থাকে, কিন্তু অপু তখনো পুরোপুরি মাটিতে গড়ায়নি। তখনো বুকের ভেতর ক্ষীণ শ্বাসের কাঁপুনি চলছিল। তখনো তিনি ছিলেন জীবিত মৃত্যুর মুখোমুখি, কিন্তু এখনও পরাজিত নন। এমনই এক সময়, কোনো এক পথচারী ছুটে গিয়ে খবর দেন তাঁর পরিবারকে “আপনার বাবা গুলি খেয়েছেন!” সে খবর যে ছেলে শুনেছিল, তার নাম শাওন। বয়স মাত্র বাইশ, অথচ সে মুহূর্তেই যেন তার বুক ফেটে দাঁড়িয়ে যায় সময়ের বিরুদ্ধে। দৌড়ে গিয়ে বাবাকে কোলে তোলে সে তখনো বাবা’র শ্বাস চলছিল, মুখে রক্ত, চোখে আতঙ্ক। ছেলের কাঁপা হাতে গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়, আর বলে, “বাবা, কিছু হবে না।” তাকে বাসায় নিয়ে রাখা হয়, সেখানেই অপুকে শেষবারের মতো চোখে চোখ রাখে তার স্ত্রী। কান্না চেপে রেখে তিনি পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করেন হয়তো তাঁর ভেতরে তখনও আশা ছিল, এক ফোঁটা জলেই ফিরবে প্রাণের সাড়া। কিন্তু অপু চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ছিলেন কোনো সাড়া মেলে না। তাঁকে ভ্যানে করে তড়িঘড়ি ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানেই খুলে যায় আরেক দৃশ্যপট। মেডিকেলের করিডোর যেন হয়ে উঠেছিল যুদ্ধক্ষেত্র একটা একটা করে আসছিল লাশ, কান্নার শব্দ, ধাক্কা খাওয়া স্ট্রেচার, ডাক্তারদের ঘুম জড়ানো চোখ, নার্সদের গলিত দায়িত্ববোধ। কেউ জানে না কোন দিকে আগে তাকাবে। যেন দেশটাও জানে না কে বাঁচবে, কে মরবে, কে শহীদ হবে, কে পরের সকালেও হারিয়ে যাবে খবরের পাতায়। মৃত্যু, তার চিরন্তন নিষ্ঠুরতায়, চেপে বসে রইল তাঁর বুকের উপর। সকাল বয়ে যায়। অপুর নিথর দেহটি যখন ফিরে আসে বাসায়, তখন সেই ঘরের দরজার সামনে এক নিঃশব্দ হাহাকার। কেউ কিছু বলে না, কেউ আর কাঁদতেও পারে না শুধু বাতাস ভারী হয়ে থাকে অপূরণীয় শূন্যতায়। আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়, তাঁর ছোট ছেলের পাশে। মৃত্যুর পর তাঁর অস্তিত্ব সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে এক কবরের মাটি, আর এক সন্তানের কণ্ঠস্বরে “এই নয় মাসে আমি বুঝেছি, বাবা ছাড়া একটা পরিবার মানে কি!” এই মৃত্যু কেবল এক জনের না। এটি এক দেশের অপচেতনার নির্লজ্জ দলিল, এক রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা, এক আন্দোলনের অনন্ত আহ্বান। অপু শহীদ হয়েছেন, কারণ তিনি মানুষ ছিলেন। আর এই দেশে, মানুষ হওয়াটাই আজ সবচেয়ে বড় অপরাধ। পরিবারের অভাব, আহাজারি ও দাবি অপুর মৃত্যুর সঙ্গে কেবল একটি প্রাণ থেমে যায়নি; থেমে গেছে একটি ছিমছাম সংসারের প্রতিদিনের রান্নার ধোঁয়া, থেমে গেছে হাসির সেই ছোট ছোট মুহূর্ত, যার কোনো খবর ছাপা হয় না পত্রিকায়। থেমে গেছে ভবিষ্যতের সমস্ত রূপরেখা, যা একদিন কল্পনায় বুনেছিল তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম সন্তানদের নিয়ে ছোট্ট একটা স্থিতি, একটু সুরক্ষা, ঘরের ভেতর কিছু নির্ভরতা। এখন সেই ঘরটি নিঃশব্দ, অথচ প্রতিধ্বনিতে পূর্ণ নিঃস্বপ্রায় এক নারী প্রতিদিন নতুন কাজ খোঁজেন, পাড়ায় পাড়ায় যান রান্না বা ঝিয়ের কাজ করতে, কিন্তু কোথাও কোনো স্থায়ীতা নেই। জীবিকা তাঁর হাতে নেই, শুধু জীবনের ভার। বড় ছেলে রবিউল ইসলাম শাওন মাত্র বাইশ বছর বয়স, অথচ মুখে গভীর এক স্থবিরতা। সে আর কাঁদে না। কান্না ফুরিয়ে গেলে মানুষ হয়তো আর্তনাদ করে না, চুপ করে থাকে। চুপ করে থেকে বলে, “বাবা ছিল বলেই বুঝিনি অভাব মানে কী।” আজ অভাব কেবল টাকা-পয়সার নয়; এ অভাব বিশ্বাসের, নিরাপত্তার, নির্ভরতার। অভাব এমন এক কিছুর, যা প্রতিদিন গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধে, আর প্রতিরাতে শোবার আগে মনে করিয়ে দেয় এই সমাজে কেউই সত্যিকার অর্থে নিরাপদ নয়, যদি না তার কণ্ঠে ক্ষমতার সুর থাকে। আর মোনান? অপু-আমেনার ছোট ছেলে, যে আগেই বিদায় নিয়েছে পৃথিবীর মঞ্চ থেকে। আজিমপুরের এক কোণে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে সে, আর এবার তার পাশে শুয়ে আছে অপু। এই পরিবার এখন আয়হীন নয় শুধু এরা রাষ্ট্রহীনও। কারণ রাষ্ট্র তাদের চায় না, চেনেও না। চিকিৎসার কোনো খরচ রাষ্ট্র নেয়নি, কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি, কোনো স্বীকৃতি তো দূরের কথা। অপু যেন অদৃশ্য, আর পরিবারটি যেন এক অনাহূত স্মৃতি যা ইতিহাস ভুলে যেতে চায়। অথচ এই পরিবারই আজ আমাদের বিবেকের আয়না, যেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে রাষ্ট্রের নির্মমতা ও নিস্পৃহতা। আমরা যদি সত্যিই রাষ্ট্র হয়ে থাকি, যদি এই পতাকাটিকে ভালোবেসে থাকি, তবে এই রক্তের ঋণ আমাদের ঘাড়ে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাস নয়, এটি দায়বদ্ধতা। আমরা চাই এই পরিবারটির জন্য স্থায়ী মাসিক সহায়তা, একখানা বাসার নিরাপত্তা, এবং একজন সন্তানের কর্মসংস্থানের নিশ্চিয়তা। শহীদ অপু কেবল দাঁড়িয়েছিলেন তবু আজ তিনি আমাদের জন্য শুয়ে আছেন আজিমপুরে। তাঁর সেই দাঁড়িয়ে থাকা যেন আজ আমাদের বিবেককে ঝাঁকিয়ে দেয় একটি মৃত বাবার চেয়ে বেশি জীবিত হয়ে ওঠে একটি জেগে ওঠা জাতির দাবি হয়ে। এক নজরে শহীদ পরিচিতি শহীদের পূর্ণনাম : মো: মনিরুল ইসলাম অপু জন্ম তারিখ/বয়স : ১৪ মে ১৯৬৯, বয়স ৫৫ বছর পেশা : মৌসুমী ফল বিক্রেতা (হকার) পিতার নাম : মৃত ফজল বেপারী মাতার নাম : মৃত শহর বানু পরিবারের সদস্য : স্ত্রী আমেনা বেগম, দুই ছেলে (একজন মৃত) জন্মস্থান : চাঁদপুর স্থায়ী ঠিকানা : রহমতপুর কলোনি, চাঁদপুর নতুন বাজার, চাঁদপুর বর্তমান ঠিকানা : ৭, গোলকপাল লেন, নবাবপুর/বংশাল, ঢাকা আহত হওয়ার স্থান : নবাবপুর রোড, বংশাল, ঢাকা আঘাতকারী : পুলিশ আহত হওয়ার (গুলিবিদ্ধ) সময়কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, আনুমানিক রাত ১১:৩০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় শাহাদতের তারিখ : ০৫ আগস্ট, ২০২৪ সময় : রাত ১১:৪০ মিনিট। (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল) স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : আজিমপুর কবরস্থান, ঢাকায় রক্তের গ্রুপ : এ +