Image of মো: জাহিদ-এ-রহিম

নাম: মো: জাহিদ-এ-রহিম

জন্ম তারিখ: ১২ জুলাই, ১৯৭৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি

শহীদের জীবনী

’’রক্তাক্ত জুলাইয়ের সাক্ষী’’ মো: জাহিদ-এ-রহিম একজন শান্ত স্বভাবের ব্যবসায়ী, একজন দায়িত্বশীল স্বামী, এক আদর্শ বাবা, আবার একইসাথে একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক, যিনি রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। নিজের পেশাগত জীবনে যতটাই নিবেদিত ছিলেন, সমাজের অসংগতি দেখলে ততটাই দ্রোহী হয়ে উঠতেন। জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে তিনি প্রমাণ করে গেছেন, ন্যায় ও সততার মূল্য কখনও বৃথা যায় না, যদিও এর বিনিময় হয় প্রাণ। জন্ম ১৯৭৯ সালের ১২ জুলাই ঢাকা শহরের এক সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জাহিদ-এ-রহিম। পিতা আব্দুর রহমান মন্ডল ও মাতা বেগম জরিনা মন্ডলের কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। শৈশব থেকেই ছিলেন নম্র স্বভাবের, মিশুক ও আত্মপ্রত্যয়ী। তাঁর শেকড় ছিল জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দমদমা গ্রামে, যেখানে তাঁর পরিবারের আত্মিক টান আজও অটুট। কর্মজীবনের শুরু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি ব্যবসায়ী জীবনে প্রবেশ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ফীজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। পেশাগত জীবনে সততা ও নিষ্ঠার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন, তেমনি মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন। স্ত্রী শারমিন জাহিদ ও দুই সন্তান নিয়ে তাঁর জীবন ছিল সুসংগঠিত, যতটা সম্ভব স্থিতিশীল। বর্তমানে তাদের স্থায়ী ঠিকানা জয়পুরহাট হলেও পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন ঢাকার বাসাবো এলাকায় (পূর্ব বাসাবো, সবুজবাগ)। সেখানে তিনতলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। বর্তমানে পরিবারটি দুশ্চিন্তায় দিন অতিবাহিত করছে। সন্তানদের বয়স অল্প হওয়ায় পিতার ব্যবসা বুঝে নিতেও পারছেনা। পরিবার ও অর্থনৈতিক বিবরণ মো: জাহিদ-এ-রহিম পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল চার। স্ত্রী ও দুই সন্তান। একমাত্র ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে, মেয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। স্ত্রী শারমিন জাহিদ একজন গৃহিণী। শহীদ হওয়ার পর থেকেই পরিবারের আর্থিক অবস্থা চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। শারমিন জাহিদ আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা, কিছু মানুষের সহানুভূতি এবং সীমিত সহায়তার উপর নির্ভর করেই দিনাতিপাত করছেন। তিনি বলেন, "ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে আমাকে। কখনো আত্মীয়, কখনো প্রতিবেশীর সাহায্যে চলছে দিনকাল।" আন্দোলন ও প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই মাস। দেশে তখন কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল সময়। দেশের নানা প্রান্তে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে। রাজধানী ঢাকাও সেই দাবির আগুনে জ্বলছিল। পরিস্থিতি ছিল অস্থির, থমথমে ও আতঙ্কজনক। এই অবস্থায় অনেকের মতো জাহিদ-এ-রহিমও সরাসরি আন্দোলনে নামেননি, কিন্তু অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন বিবেকের জায়গা থেকে। সহিংস পরিস্থিতি বিবেচনায় তিনি ১৯ জুলাই কর্মস্থল থেকে বাড়ি না ফিরে বন্ধুর বাসায় অবস্থান করেন। শহীদ হওয়ার বর্ণনা ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার। জাহিদ-এ-রহিম জুমার নামাজ শেষে শনির আখড়া এলাকায় এক পরিচিতের বাসায় যাচ্ছিলেন। তাঁর কাছে ছিল বৈধ লাইসেন্সধারী পিস্তল, যা তিনি সবসময় নিজের নিরাপত্তার জন্য বহন করতেন। তখন শহরজুড়ে উত্তেজনা, গুজব ও সন্দেহের ঢল নেমেছিল। এই সময় কয়েকজন লোক তাঁর হাতে পিস্তল দেখে আতঙ্কিত হয় এবং সন্দেহভাজন হামলাকারী মনে করে তাঁর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র ও ভারী বস্তু দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। বিকাল চারটায় আহত হন তিনি। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে, বিকাল পাঁচটায়, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর প্রিয় শরীর চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছে সরদার বাড়ি কবরস্থান, বাসাবো, সবুজবাগে। শহীদ সম্পর্কে অনুভূতি তার মৃত্যুর পরে প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা বলেন, "সে ছিল অনেক ভালো মানুষ। সবার খোঁজখবর রাখতো। ভাই-বোনদের সাথে সম্পর্ক ছিল মধুর। নিজের সংসার নিয়েই শুধু ভাবেনি, ভাবতো অন্যেদের নিয়েও।" এক প্রতিবেশী বলেন, “আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারি না, সে আমাদের মাঝে নেই। এত ভদ্র, এত ভালোমানুষ এভাবে চলে যাবে?” শেষ কথা শহীদ মো: জাহিদ-এ-রহিমের আত্মদান শুধু তাঁর পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্য এক গভীর প্রতীক হয়ে থাকবে। যে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সচেতনতা ও ন্যায়ের জন্য জীবন দিতে হয়, সে রাষ্ট্রকে ভালোবাসার দায় প্রতিটি বিবেকবান মানুষের। জাহিদ এ-রহিম ছিলেন সেই ভালোবাসার এক জ্বলন্ত প্রদীপ। নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের লিঙ্ক ১. যঃঃঢ়ং://িি.িশধষনবষধ.পড়স/ধলশবৎঢ়ধঃৎরশধ/ষধংঃঢ়ধমব/১০৬৯৭০ ২. যঃঃঢ়ং://সুধসরহ.পড়স/হবংি.ঢ়যঢ়?হবংি=১৫৩৬৪২ অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা শহীদ পরিবারের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি: ১. সন্তানদের লেখাপড়া যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা। ২. বর্তমান বাসার পিছনে শহীদের নিজস্ব জমি রয়েছে। সেখানে একটি স্থায়ী ঘর নির্মাণ করে পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে। একনজরে শহীদ মো: জাহিদ-এ-রহিমের প্রোফাইল নাম : মো: জাহিদ-এ-রহিম জন্ম তারিখ : ১২-৭-১৯৭৯ জন্মস্থান : ঢাকা পেশা : ব্যবসায়ী কর্মরত প্রতিষ্ঠান : ফীজা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দমদমা, ইউনিয়ন: বালিঘাটা, ৫ নং ওয়ার্ড, থানা: পাঁচবিবি, জেলা: জয়পুরহাট বর্তমান ঠিকানা : #১০২, ৩য় তলা, পূর্ব বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা সিটি দক্ষিণ পিতা : আব্দুর রহমান মন্ডল মাতা বেগম জরিনা মন্ডল স্ত্রী : মিসেস শারমিন জাহিদ, পেশা: গৃহিনি, শিক্ষাগত যোগ্যতা: এস.এস.সি পরিবারের সদস্য : ৩ জন, স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়ে ঘটনার স্থান : শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ি আক্রমণের ধরণ : ধারালো ও ভারী বস্তুর আঘাত আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪ সময় : বিকাল ০৪টা শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, সময়: বিকাল ০৫টা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : সরদার বাড়ি কবরস্থান, বাসাবো, সবুজবাগ, ঢাকা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জাহিদ-এ-রহিম
Image of মো: জাহিদ-এ-রহিম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আবদুল মোতালেব

মো: ইয়াসির সরকার

মো: রমজান আলী

মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত

আবদুল্লাহ সিদ্দিক

গঙ্গা চরন রাজবংশী

মো: নাদিম

মো: ইয়ামিন চৌধুরী

জিল্লুর শেখ

অজ্ঞাত

শাওন তালুকদার

সাজিদুর রহমান ওমর

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo