Image of মো: মিনারুল ইসলাম

নাম: মো: মিনারুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : চাকরিজীবী, শাহাদাতের স্থান : হাসপাতাল রোড, নারায়ণগঞ্জ

শহীদের জীবনী

“সন্তান হারিয়ে বৃদ্ধা মা ডলি শোকে পাথর হয়ে গেছেন, মিনারুল মিনারুল বলে কেবলই মাতম করে চলেছেন তিনি” মো: মিনারুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি। তার পিতা মৃত এনামুল হক। জন্মের দুই বছরের মাথায় তিনি পিতাকে হারান। মাতা মোছা: ডলি। বর্তমানে তার মাতা ৬২ বছর বয়সী বয়স্ক নারী। শহীদ মিনারুলের জন্মস্থান রাজশাহী জেলার রাজপাড়া (বর্তমানে কাশিয়াডাঙ্গা) থানার গোলজারবাগ গ্রামে। বাবামায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ তিনি। তার বড় ২ ভাই এবং ১ বোন রয়েছে। তারা সবাই বিবাহিত এবং সবার আলাদা সংসার। তার ভাইয়েরা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। শহীদ মিনারুল ইসলাম পেশায় চাকরিজীবী ছিলেন। তার কর্মরত প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জের হ্যামিল্টন মেটাল কর্পোরেশন লিমিটেড, যা বেঙ্গল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে সিনিয়র অপারেটর হিসেবে ২০১৮ সাল থেকে তিনি কর্মরত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে চাকরির কারণে মিনারুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জের একটি মেসে থাকতেন। মিনারুল ইসলাম ছিলেন বিবাহিত। তার স্ত্রী নুরেসান খাতুন তার মায়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। মা আর স্ত্রীকে নিয়ে ছিল তার সংসার। তার স্ত্রী ছিলেন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।। বিয়ের ৭ বছর পর আল্লাহ তার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান দিয়েছেন দেখে তাদের খুশির অন্ত ছিল না। কিন্তু এক খুনি স্বৈরাচারের রোষানলে পড়ে মিনারুলের তার অনাগত সন্তানকে দেখে যাওয়ার সৌভাগ্য হলো না। যেভাবে শহীদ হন মিনারুল জুলাই ২০২৪। দেশব্যাপী শুরু হয় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ১৬ই জুলাই রংপুরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। আন্দোলন সংগ্রাম বাড়তেই থাকে প্রতিদিন। সেই সাথে প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা ও আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে শহীদ ও পঙ্গুত্ব বরণ করতে থাকে দেশের মুক্তিকামী ছাত্র জনতা। ২০ শে জুলাই ২০২৪। মেসে থাকলে মেসের সদস্যদের পালা করে বাজার করতে হয় প্রতিদিন। সেদিন ছিল মিনারুলের বাজার করার দিন। মেসের গলি থেকে বের হয়ে প্রধান সড়কে মাত্রই পা রেখেছেন মিনারুল। সামনে ছিল বিজিবি বাহিনীর সদস্যরা। মিনারুলকে দেখা মাত্রই তার দিকে তারা গুলি ছোড়ে। সাথে সাথে পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় জনগণ মিনারুলকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তীব্র বাধার সম্মুখীন হয় তারা। সকল বাধা টপকে অবশেষে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মিনারুল ইসলামকে। সেখানে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে খানপুর নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়ার সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে পথেই মারা যান তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২১ তারিখ সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে মিনারুল ইসলামের শ্যালক সাব্বির রহমান মরদহ নিয়ে রাজশাহী পৌঁছান। বাদ জোহর জানাযা সম্পন্ন করে রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গার হড়গ্রাম গোরস্থানে তাকে কবরস্থ করা হয়। অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি মিনারুল ইসলাম। এর আগেই স্বৈরাচারের বুলেট কেড়ে নিল তার প্রাণ। সন্তান হারা হলেন বৃদ্ধ মা মোছা. ডলি। বিধবা হলেন নুরেসান খাতুন। আর এতিম হয়ে গেল অনাগত সন্তান। সন্তান হারিয়ে বৃদ্ধা মা ডলি শোকে পাথর হয়ে গেছেন। মিনারুল মিনারুল বলে কেবলই মাতম করে চলেছেন তিনি। কোনো সান্ত্বনায় যেন শান্ত হচ্ছে না বৃদ্ধ মায়ের মন। অন্যদিকে স্বামীকে হারিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নির্বাক, বাকরুদ্ধ। তিনি যেন বুঝতেই পারছেন না তার স্বামী নেই। কোথা থেকে কী হয়ে গেল তা ভাবতেই পারছেন না তিনি। মিনারুলের সংগ্রামী জীবন মিনারুলের যখন দুই বছর বয়স, তখন তার পিতা ইনামুল হক মারা যান। অল্প বয়সে পিতা হারানো মিনারুল ইসলাম সংসারের দরিদ্র্যতা, পরিবারের দুঃখকষ্টগুলো খুব কাছ থেকে দেখেই বড় হয়েছেন। প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়েছেন পিতৃহারা এতিম এনামুল। সেইসব কষ্টের দিনগুলো কেবল তার মনের ভেতর গাঁথা ছিল। সীমাহীন দরিদ্র্যতার কারণে পড়ালেখাটাও বেশিদূর এগোয়নি তার। ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলেন ইউসেফ স্কুলে। এরপর শুরু হয় তার সংগ্রামী কর্মজীবন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোছা: নুরেসান খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিনারুল ইসলাম। ২০১৮ সালে হ্যামিলটন মেটাল কর্পোরেশন লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। চাকরির সুবাদে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের একটি মেসে। প্রথমদিকে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে থাকলেও স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা হলে গ্রামে তার মায়ের কাছে রেখে যান স্ত্রীকে। তারপর তিনি ওঠেন মেসে। তাদের দাম্পত্য জীবনের ৭ বছরের মাথায় সন্তান সম্ভাবা হন স্ত্রী নুরেসান খাতুন। বিবাহের এতগুলো বছর পরে বাবা হতে যাচ্ছেন মিনারুল ইসলাম-এ কারণে আনন্দের যেন অন্ত ছিল না তার। কতশত পরিকল্পনা ছিল অনাগত সন্তানকে নিয়ে। সেই শত স্বপ্ন আর বহু দিনের অপেক্ষা যেন আক্ষেপ হয়েই রইল। শহীদ মো: মিনারুল ইসলাম ছিলেন পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ব্যক্তি। তার বেতন ছিল মাসিক ১৮০০০ টাকা। এই অর্থেয় চলতো তার সংসার। রাজশাহীতে ছোট একটি দুই তলা বিশিষ্ট বাড়িতে তারা ৩ ভাই একসাথে থাকতেন। একসাথে থাকলেও তার ২ ভাইয়ের পরিবার ছিল আলাদা। মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে মিনারুলের পরিবার ছিল আলাদা। বর্তমানে তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী নূরেসান খাতুন তার বাবার বাসায় থাকছেন। স্ত্রীর বাবা-মা ও ৯ বছর বয়সি বোনসহ ৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস তার স্ত্রীর বাবা। তিনি ভাড়ায় অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: মিনারুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ০১.০১.১৯৯৫ শহীদ হওয়ার তাং ও সময় : ২০ শে জুলাই, ২০২৪; ৬টা ১৫ মিনিট। শহীদ হওয়ার স্থান : হাসপাতাল রোড, নারায়ণগঞ্জ আঘাতের ধরন : পেটে গুলিবিদ্ধ গুলিবিদ্ধের স্থান : সিদ্ধিরগঞ্জ গুলিবিদ্ধ হওয়ার তাং ও সময় : ২০ শে জুলাই, ২০২৪; বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট ঘাতক : বিজিবি সমাধিস্থল : হড়গ্রাম নতুন পাড়া গোরস্তান, কাশিয়াডাঙ্গা, রাজশাহী পেশা : চাকরিজীবী পিতা : মৃত এনামুল হক মাতা : মোছা: ডলি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-গোলজারবাগ, ইউনিয়ন-রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, থানা-রাজপাড়া (কাশিয়াডাঙ্গা), জেলা-রাজশাহী বাড়িঘর ও সম্পদ : নিজেদের দোতলা একটি বাড়ি। স্ত্রী-সন্তান : বিয়ের ৭ বছর পর ৮ মাসের সন্তান সম্ভাবা স্ত্রী নুরেসান খাতুন। বয়স ২৫। শিক্ষাগত যোগ্যতা-অষ্টম শ্রেণি পাস ভাইবোন : ২ ভাই, ১ বোন। তারা সবাই বিবাহিত এবং আলাদা সংসার আছে তাদের শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদ মিনারুলের অনাগত সন্তান এবং স্ত্রীর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান ২. শহীদের মাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মিনারুল ইসলাম
Image of মো: মিনারুল ইসলাম
Image of মো: মিনারুল ইসলাম
Image of মো: মিনারুল ইসলাম
Image of মো: মিনারুল ইসলাম
Image of মো: মিনারুল ইসলাম
Image of মো: মিনারুল ইসলাম
Image of মো: মিনারুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মো: সেলিম হোসেন

মো: আব্দুল মান্নান

মো. মেহেদী হাসান রবিন

মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

 মো: মাহবুব হাসান নিলয়

মো: রিপন ফকির

 মো: সাব্বির হাসান

মাহফুজ আলম শ্রাবণ

মো: শিমুল

মো: ইয়াহিয়া আলী

মো: তারিক হোসেন

মো: রেজাউল হক সরকার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo