Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত

নাম: মো: খালিদ হোসেন শান্ত

জন্ম তারিখ: ৯ মার্চ, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেওয়া আগুন নেভাতে গিয়ে আটকা পড়ে। বাঁচতে গিয়ে পাশের ছাদে লাফ দিলে- পড়ে গিয়ে মৃত্যু, হোটেল জাবের, চিত্রার মোড়, যশোর

শহীদের জীবনী

নিকৃষ্ট শাসক দ্বারা পরিচালিত দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের যশোর জেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন রায়পাড়া গ্রামে ০৯ মার্চ ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে মো: মোতালেব মিয়ার ঘর আলো করে আসে খালিদ হোসেন শান্ত। তার বাবা মায়ের বিয়ের দীর্ঘ ১৩ বছর পর আল্লাহর অশেষ রহমতে তার জন্ম হয়। তার বাবা পেশায় একজন রিকশাচালক, তার মা একজন আদর্শ গৃহিণী। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো গুন্ডা বাহিনী শান্ত খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার পরিবারে তার বাবাই একমাত্র উপার্যন করতেন। তিনিই পরিবারের সকল চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতেন। শান্তর স্বপ্ন ছিল সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। তার বাবা মায়ের দুঃখ দুর্দশা দুর করবে। তার বাবা মাকে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিবে । কিন্তু স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী ও হেলমেট বাহিনীরা তার স্বপ্ন আর পূরণ করতে দিলো না। তার বাবা মা কান্না করতে করতে বলেন আমরা কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো কে আমাদের দেখে রাখবে কে আমাদের কবরের পাশে গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে? যেভাবে শহীদ হলেন খালিদ হোসেন শান্ত আওয়ামী পৈশাচিক সরকার ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের সাথে অঘোষিত ভাবে যুদ্ধে নেমে পড়ে। টোকাই লীগ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, চাইনিজ রাইফেল, ছুরি, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শহরের বিভিন্ন যায়গায় আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর হায়েনা পশুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনের উপর এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে হেলমেট ধারি পুলিশ। তাদের এই গুলিতে পথচারী থেকে শুরু করে মায়ের কোলের অবুঝ শিশুও রেহাই পায় নাই। শহীদ শান্তর বাবা তাকে একদফা দাবির আন্দোলনে রাস্তার মোড়ে দেখেছিলেন। আন্দোলন চলাকালীন একপর্যায়ে হোটেল জাবেরে কৌতুহল বশত ঢুকে পড়ে শহীদ শান্ত। সেদিন আওয়ামী নরপিশাচরা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, সরকারি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের সেই ধ্বংসযজ্ঞে ছাই হয় জাবের হোটেলটি। গুন্ডা বাহিনীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি হোটেলে অবস্থানরত শহীদ খালিদ হোসেন শান্ত। একপর্যায়ে ৯ম তলা থেকে নিজের গায়ের জামা হাতে পেঁচিয়ে উড়াতে থাকে ও বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। আন্দোলনকারীরা শান্তকে উদ্ধার করে আনে। ততক্ষনে আগুনে তার পুরো শরীর পুড়ে যায়। কমপ্লিট শাটডাউন জারি থাকায় শান্তকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয় তারা। এরপরও যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। ততক্ষণে খালিদ হোসেন শান্ত আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে শাহাদাতের সুধা পান করেন। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেন, ‘শান্ত আমাদের অনুপ্রেরণা, আমরা তার কাছে চিরঋণী হয়ে গেলাম।’ আন্দোলনের অগ্রসেনানি শহীদ শান্ত আন্দোলনের শুরু থেকেই নিরস্কুশ অংশগ্রহণ ছিল মো: খালিদ হোসেন শান্ত। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে সে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতো। এই ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করার জন্য স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ ও গুন্ডা লীগ ছাত্র জনতার উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। শাহাদাত এর দিন সকালে আন্দোলনে যেতে চাইলে তার মা তাকে বলে তোর কিছু হয়ে গেলে আমরা কোই যাবো আমাদের কী হবে শান্ত তার মাকে কোমল ভাষায় বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে বললেন "আম্মু আবু সাইদ যদি পাঁচটা গুলি খাতি পারে, তা আমি গুলি খেয়ে মইরে যাবো আম্মু শহীদ হয়ে যাবো, আমি চইলে যাই। তার আম্মু বলে তুমি যাইয়ো না, তুমি একটা ছেলে আমার আর কেও নেই। মাটি দেবে কিডা? আমাগে খাতি দেবে কিডা? মা আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তাহলে আমি তোমার জন্য জান্নাতে অপেক্ষা করবো।" দুনিয়াতে আমি তোমাদেরকে আল্লাহর জিম্মায় ও আমার বিজয়ী ভাইদের কাছে রেখে গেলাম এ কথা বলে শান্ত বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। আর ফিরলো না ফিরবেও না সে তার মায়ের বুকে। তার বাবা মা হয়ে গেলেন পুনরায় নিঃসন্তান। শান্ত তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। শান্তর মা খাদিজা বেগমের আর্তনাদ যেন থামছেই না। কেমন আছেন শান্তর পরিবার শান্তর বাবা মা হয়ে গেলেন সন্তান হারা। তার বাবা মার বিয়ের ১৩ বছর পর একটি সন্তান পেয়ে খুশি ছিলেন তারা। কিন্তু ছেলের ১৮ বছর বয়সেই তাকে আবার হারিয়ে ফেললো। শান্তর শহীদ হওয়ার পর তার মা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে, কথা বলতে পারে না ঠিক মতো। আওয়ামী টোকাই লীগ শান্তর মাকে করে দিলো পূণরায় নিসন্তান। রেখে যাওয়া স্মৃতি শান্ত ছোট থেকেই ছিল অনেক অমায়িক। সবার সাথে সুন্দর ব্যবহারে মাতিয়ে রাখতো শ্রেণীকক্ষ। বাবা মা শিক্ষক ও বড়োদের সম্মান করতো। পরোপকার করতে ভালোবাসতেন। শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত তার অনুপস্থিতি উপলব্ধি করেন। শিক্ষকরা শহীদ খালিদ হোসেন শান্তকে ছাত্র হিসেবে পেয়ে গর্ববোধ করেন। শিক্ষকরা তার জন্য প্রতিনিয়তো দোয়া করছেন শহীদ শান্তকে যেন আল্লাহ তায়ালা জান্নাত বাসী করেন। শহীদের সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল নাম : মো: খালিদ হোসেন শান্ত পিতার নাম : মো: মোতালেব মিয়া পেশা : রিকশাচালক মাতা : খাদিজা বেগম পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ জন ভাই-বোন : নেই জন্মস্থান : যশোর পেশা/পদবী : ছাত্র নিজ জেলা : যশোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : যশোর সরকারী কলেজ ঘটনার স্থান/পয়েন্ট/এলাকা : হোটেল জাবের, চিত্রার মোড়, যশোর আক্রমণকারী : আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দেওয়া আগুন নেভাতে গিয়ে আটকা পড়ে। বাঁচতে গিয়ে পাশের ছাদে লাফ দিলে- পড়ে গিয়ে মৃত্যু আহত হওয়ার সময়কাল : ০৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৪:৩০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ০৫ আগস্ট ২০২৪, আনুমানিক সন্ধ্যা ৬.০০টা, হোটেল জাবের, চিত্রার মোড়, যশোর পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং বিপদাপদে পাশে থাকা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত
Image of মো: খালিদ হোসেন শান্ত

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মেহেদী হাসান

মো: মাহিম হোসেন

মো: আলমগীর মোল্লা

আব্দুস সালাম

মো: রকিবুল ইসলাম

আলম সরদার

মো: হামিদ শেখ

সামিউর রহমান সাদ

মো: মেহেদী হাসান রাব্বি

আবদুল্লাহ

বিপ্লব শেখ

মো: সোহানুর রহমান (শিহাব)

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo