Image of সোহান শাহ

নাম: সোহান শাহ

জন্ম তারিখ: ১৩ নভেম্বর, ১৯৯৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৭ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গার্মেন্টস শ্রমিক, ভারগো গার্মেন্টস, রামপুরা, ঢাকা শাহাদাতের স্থান: সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল -সিএমএইচ (ঢাকা)

শহীদের জীবনী

শহীদ পরিচিতি সোহান শাহ একজন সাধারণ মানুষ, কিন্তু আজ অসাধারণ এক নাম। গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে শহীদ হওয়া এই তরুণ ছিলেন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার চন্ডিখালী গ্রামের পরিচিত এক চেহারা। পিতা সেকেন্দার শাহ, মা সুফিয়া বেগম আর স্ত্রী শম্পা খাতুন এই ক্ষুদ্র পরিবারই ছিল তাঁর জীবনের কেন্দ্রে।একটি গার্মেন্টস শ্রমিক এক পরিবারের সব স্বপ্ন, এক অব্যক্ত প্রতিবাদ শহীদ পরিচিতি ১৯৯৭ সালের ১৩ নভেম্বর, মাগুরার মাটি আর কুয়াশা ভেজা এক সকালে জন্ম নেন সোহান। কৃষিজীবী পরিবারে জন্ম নিয়েও তাঁর চোখে ছিল আলাদা এক স্বপ্ন পরিবারের দারিদ্র পেরিয়ে একদিন ভাল কিছু করার। সোহান দাখিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু অভাব নামক দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিততে পারেননি। বইয়ের পাতা ছেড়ে তাঁকে নামতে হয় জীবিকার সংগ্রামে। ঢাকায় এসে রামপুরার ভারগো গার্মেন্টসে চাকরি নেন। সেলাইয়ের মেশিনে দীর্ঘ সময় বসে কাটে তাঁর দিন। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন রামপুরার ছোট্ট একটি বাসায়। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। একদিনের ছুটি মানেই গ্রামের বাড়িতে ফোন করে মায়ের কণ্ঠ শোনা আর একটা নিরব দীর্ঘশ্বাস "আর কতদিন এমন চলবে?" অর্থনৈতিক বিবরণ সোহানের উপার্জনেই চলত পুরো সংসার। বাবা বয়স্ক, কাজ করতে পারেন না। মা অসুস্থ, ওষুধ কিনতে হয় ধার করে। স্ত্রী শম্পার মুখে মাঝে মাঝে হাসি ফুটত সোহানের টাকায় কেনা শাড়িতে। কিন্তু তাও মাসের শেষ দিকে চাল ডাল মিলিয়ে হিসেব করে খেতে হতো। আন্দোলনে যোগদান সোহান রাজনীতিতে ছিলেন না। প্রতিবাদী কোন কর্মসূচিতে যোগ দেননি। ১৯ জুলাই ২০২৪, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার একটি মিছিল হয় রামপুরায়। সোহান নিজের অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে মিছিল দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন। আন্দোলনে যোগ দিয়ে মিছিলে স্লোগান দিতে থাকেন। একজন নাগরিক হিসেবে সামান্য স্লোগানই যে তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তা কে জানতো? জুলাই-আগস্টের প্রেক্ষাপট ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট দেশের রাজপথে উত্তেজনার নামান্তর। ছাত্র-জনতার আন্দোলন, পুলিশি বাধা, টিয়ার গ্যাস আর গুলির গর্জন তখন নিত্যদিনের চিত্র। সোহানের মৃত্যু সেই ভয়াবহ সময়ের আরেকটি রক্তাক্ত চিহ্ন। যেভাবে তিনি শহীদ হলেন ১৯ জুলাই ২০২৪। রামপুরার উত্তপ্ত রাজপথে শুরু হয় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়া ও গুলিবর্ষণ। হঠাৎ একটি গুলি বুক চিরে হার্টের পাশ দিয়ে শরীরে ঢুকে পড়ে সোহানের। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ২৩ আগস্ট ২০২৪ সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। পরে সিএমএইচ-এ অপারেশনের সিদ্ধান্ত হয়। দীর্ঘ একমাসের বেশি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে, ২৭ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অপারেশনের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সোহান শাহ মারা যান। সোহান শহীদ হয়েছেন নীরবে, বিনা অপরাধে, একটিমাত্র গুলিতে। কিন্তু তাঁর গল্প যেন আমাদের না থামায়, বরং প্রশ্ন তোলে এই মৃত্যু কার দায়? নিকটাত্মীয়ের অভিমত সোহানের দুলাভাই শফিকুল ইসলাম লাবু বলেন, “সে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। গার্মেন্টসে কাজ করত। শুধু একটি গুলিতে সব শেষ হয়ে গেল। ওর মৃত্যুর পর যেন আমরা বাঁচার পথটাই হারিয়ে ফেলেছি।” অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা সোহান শাহর মৃত্যু শুধু একজন শ্রমিকের প্রাণনাশ নয়, এটি একটি পরিবারকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়া এক নির্মম পরিণতি। তাঁর স্ত্রী শম্পা খাতুন আজ একা, সন্তানবিহীন হলেও ভবিষ্যৎ শূন্যতায় ডুবে গেছে। এই পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক সহায়তা, বাসস্থান ও চাকরির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। একনজরে শহীদ প্রোফাইল নাম : সোহান শাহ, শিক্ষাগত যোগ্যতা: দাখিল পাশ পেশা : গার্মেন্টস শ্রমিক, ভারগো গার্মেন্টস, রামপুরা, ঢাকা জন্ম তারিখ : ১৩ নভেম্বর ১৯৯৭, জন্মস্থান: শ্রীপুর উপজেলা, মাগুরা জেলা পিতা : সেকেন্দার শাহ, (বয়োবৃদ্ধ), মাতা: সুফিয়া বেগম, গৃহিণী স্ত্রী : শম্পা খাতুন আহত : ১৯ জুলাই ২০২৪, রামপুরা, ঢাকা চিকিৎসা : জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট, সিএমএইচ মৃত্যু : ২৭ আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা আক্রমণকারী : পুলিশ গুলির ধরণ : গুলি হার্টের পাশে বিদ্ধ

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সোহান শাহ
Image of সোহান শাহ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: কালাম

মো: বাবলু ফরাজী

মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির

মো: সাব্বির হোসেন

মো: জামাল উদ্দীন শেখ

মো: উসামা

মো: হাফেজ আনাজ বিল্লাহ

মো: মাহফুজুর রহমান

সামিউর রহমান সাদ

 ফয়সাল হোসেন

মো: আলমগীর সেখ

আলিফ আহমেদ সিয়াম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo