Image of  ফয়সাল হোসেন

নাম: ফয়সাল হোসেন

জন্ম তারিখ: ৩০ অক্টোবর, ১৯৯৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, এলএলএম (মাস্টার্স) শেষ বর্ষ, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। শাহাদাতের স্থান : জাবের হোটেল, যশোর

শহীদের জীবনী

৩৬ জুলাই, নামটা প্রতীকী। বাংলার মানুষদের দীর্ঘশ্বাস থেকে মুক্তির দিন। স্বৈরাচারের পতনের দিন। স্বৈরাচারের পতনের এই খবর আনন্দের হওয়ার কথা ছিল। এই আনন্দঘন পরিবেশেও অনেকে তার জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন মুক্তির জন্য। মুক্তিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। এমনি একজন বীর সাহসী হলেন ফয়সাল হোসেন। শহীদ ফয়সাল হোসেন, ৩০ অক্টোবর ১৯৯৯ সালে যশোর জেলার পুরাতন কসবা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এম এম কবির হোসেন। এই শহীদের জন্মদাত্রী হলেন, হোসেন আরা পারভীন। শহীদ ফয়সাল হোসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএমএম ডিপার্টমেন্টে মাষ্টার্সে শেষবর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাঁর বাবার ঠিকাদারির ব্যবসা রয়েছে। সেটাই পরিবারের আয়ের উৎস। তাঁর বাকি দুইভাই এর একজন বিমানবাহিনীতে চাকুরী করেন, আরেকজন সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। ঘটনার সামগ্রিক বিবরণ শহীদ ফয়সাল হোসেন জুলাই এর শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে সকালের দিকে বের হয়ে যেতেন। ১ আগস্ট তিনি দুপুর ১২ টার দিকে বের হয়ে গিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে। আগস্টের ৩ তারিখের উত্তপ্ত সংগ্রামের মাঝেও বেলা ১১ টার দিকে আন্দোলনে বের হন ফয়সাল হোসেন। ৪ তারিখে নিউমার্কেট এলাকায় আরও কিছু বন্ধু সহ ৯ জন একত্রিত হন এবং সেদিন বাসায় ফেরার পর তাঁর মা তাঁকে আন্দোলনে অংশ নিতে বারণ করলে তিনি তাঁর মোবাইল ফোনে আন্দোলনে নিহত ও আহতদের ছবি দেখিয়ে মা’কে বুঝানোর চেষ্টা করেন। ৫ তারিখে তিনি বাসায় বসে টিভি দেখছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি বন্ধুদের সাথে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ঐ সময় যশোরের জাবির হোটেলে দুর্বৃত্তদের দেয়া অগ্নিসংযোগের কথা শুনে তিনি সেখানে বন্ধুদের সাথে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন। বিকাল আনুমানিক ৩.৪৫ টায় ফয়সাল হোসেন আগুনের ঘেরাওয়ের মধ্যে পতিত হন। এর মধ্যে তিনি তাঁর বাবাকে কল দিয়ে বলেন, “বাবা আমি জাবের হোটেলে আটকা পড়েছি আমাকে বাঁচাও।” ফয়সালের বাবা অনতিবিলম্বে বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছোট ছেলেকে একটি হেলিকপ্টার পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বলেন এবং নিজে জাবের হোটেলের সামনে গিয়ে উদ্ধার করার চেষ্টা করে। এমন সময় একটি হেলিকপ্টার আসলে তিনি আশা করেন যে এবার হয়তো ছেলেকে বাচানো সম্ভব হবে। কিন্তু হেলিকপ্টারটি দুই-তিন চক্কর দিয়ে জাবের হোটেলের উপর থেকে শুধু একজন ব্যক্তিকে উদ্ধার করে চলে যায়। উদ্ধারের চেষ্টাকালে ফয়সালের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে ছাত্ররা তাঁকে সেবা করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আগুনের মধ্য হতে বেরুতে পারেননি ফয়সাল। শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। পরবর্তীতে শহীদ ফয়সালের মরদেহ যশোর সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে শনাক্ত করা হয় এবং বাসায় নিয়ে আসা হয়। জুলাইয়ের এ বৈষম্যেবিরোধী ও পরবর্তীতে স্বৈরাচার হটানোর এ আন্দোলন সফল হয়েছে সকল পেশার মানুষদের অংশগ্রহণে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, বিজয়ের পরেও শহীদ ফয়সালের মতো যুবকেরা দেশরক্ষার কাজে, মানুষকে বাঁচানোর কাজে এতো নিমগ্ন ছিলেন যে, নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথাই ভুলে গিয়েছিলেন। তাদের এই জীবনের আত্মত্যাগ জুলাই বিপ্লবে এনে দিয়েছে নতুনত্ব পাশাপাশি প্রেরণা যোগাচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে হাতে হাত রেখে, দেশকে পুনর্গঠন করার। ব্যক্তি ফয়সালের কৃতিত্ব ফয়সাল হোসেন কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি কোরিয়ান ভাষা শিখে স্কলারশিপের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সাহসিকতার কারণে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। ফয়সালের বাবা এম এম কবির হোসেন ঠিকাদারী ব্যবসা করেন। ফয়সাল বার কাউন্সিলের পরীক্ষা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং পরিবার তাঁকে নিয়ে গর্বিত ছিল। পরিবারের অভিব্যক্তি ছেলের স্মৃতি সামনে যখনই আসছে, তখনই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন কবির হোসেন, শহীদ ফয়সালের গর্বিত বাবা। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “আমার ছেলে অনেক ভালো ছিল। সে তার বোন নেই বলে সবসময় মায়ের কাজে সহায়তা করতো এবং মানুষের উপকারে সবসময় দৌড়ে যেতো। আমার সাথে বন্ধুর মতো সবকিছু শেয়ার করতো। তার সাহসিকতা এবং মানবিকতা আমাদের পরিবারে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।” শহীদের স্মরণে করণীয় আমাদের উচিৎ শহীদ ফয়সালদের ভূলে না যাওয়া, শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং শহীদ পরিবারকে আশ্বাস দেওয়া। শহীদের পিতা হারিয়েছেন এক ছেলে। কিন্তু ফেরত পেয়েছেন যুদ্ধজয়ী শতশত ছেলে। এই সকল গাজীরা পাশে থাকুক শোকসন্তপ্ত শহীদ পরিবারের। শহীদ ফয়সালরা আমাদের সম্পদ। তাঁদের শাহাদাতের আমানত আমাদেরকে ধারণ করতে হবে। যে স্বপ্ন নিয়ে তাঁরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। তবেই আমাদের দেশ সত্যিকারের সোনার বাংলা হয়ে উঠবে। একনজরে শহীদের পরিচিতি শহীদের পূর্ণনাম : ফয়সাল হোসেন জন্ম তারিখ : ৩০ অক্টোবর, ১৯৯৯ পেশা : ছাত্র, এলএলএম (মাস্টার্স) শেষ বর্ষ, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পুরাতন কসবা, ইউনিয়ন: রায়পাড়া, ঢাকা রোড, থানা: যশোর সদর, জেলা: যশোর পিতার নাম : এম এম কবির হোসেন পিতার পেশা ও বয়স : ঠিকাদারি ব্যবসায়, ৬৮ মাসিক আয় : ১৫,০০০/-(প্রায়) মায়ের নাম : হোসনে আরা পারভিন মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ৫৩ পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৫ (পাঁচ) : ভাই-১: এম এম ফাহাদ হোসেন (৩০), যুক্তরাজ্য প্রবাসী : ভাই-২: ফাহাদ হোসেন (২৩), বিমান বাহিনীতে চাকরিরত ঘটনার স্থান : জাবের হোটেল, যশোর মৃত্যুর কারণ : জাবের হোটেলে আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন আহত ও নিহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪ বিকেল ৪:০০ (প্রায়), জাবির হোটেল, যশোর পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ভাতার ব্যবস্থা করা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  ফয়সাল হোসেন
Image of  ফয়সাল হোসেন
Image of  ফয়সাল হোসেন
Image of  ফয়সাল হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মো: ইউসুফ শেখ

 মো: সাওয়ান্ত মেহতাব

আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিন

মেহেদী হাসান আলিফ

মো: মেহেদী হাসান

সামিউর রহমান সাদ

মো: মাহিম হোসেন

মো: হাফিজ উদ্দীন

মো: ইউসুফ আলী

সুরুজ আলী (বাবু মিয়া)

মো: মাসুদ রানা মুকুল

আব্দুল আজিজ (চাঁন মিয়া)

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo