Image of  হান্নান

নাম: হান্নান

জন্ম তারিখ: ৩০ জানুয়ারি, ১৯৯২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : বাড্ডায়

শহীদের জীবনী

শহীদ হান্নান চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়বাড়ি, মৈশামুড়া গ্রামে ১৯৯২ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো: আমিন মিয়া ও মাতার নাম রসিদা বেগম। তিনি শৈশব ও কৈশোর নিজ গ্রামে কাটিয়েছেন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। নিম্ন মধ্যবিত্ত হওয়ায় মাধ্যমিকে বিদ্যাপীঠ ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন শহীদ হান্নান। বিয়ের পর জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসেন। রাজধানীর বাড্ডা শহরে তিন বন্ধু মিলে বেকারীর ব্যাবসা শুরু করেন। যার নাম দিয়েছিলেন তিনি আপন বেকারী। ধীরে ধীরে ব্যাবসা বড় হতে থাকে। ফলে সংসারের অর্থাভাব দ্রুত দূর হয়। যে কারণে স্ত্রীর সকল সখ ও আহ্লাদ পূরণ করতে মোটেও বিলম্ব করেন না হান্নান। এভাবেই সুখের সংসারে পার হয় একের পর এক দিন। স্বামী- স্ত্রী এই সুখ ভাগাভাগি করতে অনাগত সন্তানের অপেক্ষা করেন। অতঃপর সে স্বপ্ন পূরণ হয় হান্নানের। স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসে। খুশীতে আত্মহারা হয়ে ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সকলের কাছে নীলমণির জন্য দোয়া কামনা করেন। ‘আন্দোলন সেতো জীবনের অন্য নাম, জীবন মানেই সংগ্রাম’ সুখ ডিঙিয়ে আন্দোলন হঠাৎ ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সারাদেশে কোটার বিরুদ্ধে ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু হয়। এমতাবস্থায় তৎকালীন স্বৈরাচার শাসক শেখ হাসিনা ছাত্রদেরকে ব্যঙ্গ করে রাজাকার বলে গালি দেয়। সাধারণ একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থেকে গণহত্যা। তার ফল স্বরূপ সবার কলিজা থেকে ভয় উঠে গণআন্দোলন রূপ নেয়। গণআন্দোলন থেকে সম্মুখ যুদ্ধ। যুদ্ধের ফলাফল সরকার পরিবর্তন। তাই বলা যায় গত জুলাই-আগস্ট মাস ছিল আন্দোলনের মাস। আন্দোলনে যোগদানের কারণ প্রতিদিন নিজের কর্মস্থানে যাওয়ার সময় রাস্তায় ছাত্র জনতার আন্দোলন উপলব্ধি করতেন হান্নান। আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে রোজ ভাবতেন আজকেই তিনি আন্দোলনে যাবেন কিন্তু বেকারীর ব্যাবসায় সময় দিতে গিয়ে অনেক রাতে ফিরতে হতো তাঁকে। সেসব তোয়াক্কা না করে গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার কোনো কিছু না ভেবেই তিনি আন্দোলনে যোগ দেন। মনে মনে কল্পনা করেন পরাধীন দেশকে স্বৈরাচার শাসক শেখ হাসিনা থেকে মুক্ত করে স্ত্রী ও অনাগত সন্তানকে তার বীরত্বের গল্প শোনাবেন। ‘আমার আদরের ধন আমাকে ছেড়ে চলে গেল! এখন আমি কার সাথে মনের কথা বলব’ শাহাদতের প্রেক্ষাপট সেদিন স্বৈরাচারী হাসিনার পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী বাড্ডা অঞ্চল ঘেরাও করে রাখে। চারিদিকে ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে অসংখ্য গুলি ছুড়তে থাকে। হঠাৎ একটা গুলি এসে হান্নানের উরুতে এসে আঘাত হানে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। অতঃপর ২০ জুলাই ২০২৪, শনিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে হান্নানের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে শহীদের লাশ গ্রামে নিয়ে যায় তাঁর মামা শ্বশুর। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে পরিবার। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মায়ের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বৃদ্ধ বাবা মাতম করে বলেন- ‘আমার আদরের ধন আমাকে ছেড়ে চলে গেল! এখন আমি কার সাথে মনের কথা বলব।’ সন্তানদের মধ্যে সবার চেয়ে হান্নানকে বেশি পছন্দ করতেন আমিন মিয়া। যে কারণে বাকি ছেলেদের কাছে না থেকে ছোট ছেলের কাছে অবসর জীবন পার করছিলেন। অতঃপর শহীদের লাশ জানাজা পড়াতে খাটিয়াতে তোলা হয়। মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর বড়বাড়ি, মৈশামুড়া, হাজীগঞ্জ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। আমার সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা কি আসলেই বেঁচে আছি? নাকি জীবন্ত লাশ? পরিবারের শহীদ পরবর্তী জীবন শহীদ হান্নানের হঠাৎ মৃত্যুতে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। মাত্র সাত মাস আগে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। পৈতৃক জমি পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বন্টন হলে তিনি বারো শতক জমি লাভ করেন। তার মৃত্যুর পর চার ভাই এক হয়ে সেই জমি দখল করার চেষ্টা করছেন। শহীদের স্ত্রী বর্তমানে তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছেই আছেন। এই মুহূর্তে শহীদ পরিবারে বাড়তি কোন উপার্জন নেই। একমাত্র হান্নানই ছিল বাবা-মা, ও তাঁর স্ত্রীর সংসারের খরচ যোগান দাতা। শহীদ পিতা বলেন- ‘আমার সন্তানদের নিরাপত্তা কোথায়? আমরা কি আসলেই বেঁচে আছি? নাকি জীবন্ত লাশ?’ ‘হান্নানকে যে বা যারা হত্যা করেছে আমি তাঁর ফাসি চাই’ প্রিয়জনদের অনুভূতি শহীদের মামা শ্বশুর ফাহাদ ভুঁইয়া বলেন-‘আমার জামাই অনেক ভালো মানুষ ছিল। আমার ভাগ্নিকে সব সময় খেয়াল রাখত। মাত্র সাত মাসে আমাদের পরিবারের মন জয় করেছিল হান্নান। তাকে কখনো আমি রাগতে দেখিনি। বাবা মায়ের ভীষণ দায়িত্ববান ছেলে ছিল সে। তার মৃত্যুর এই শোঁক আমাদের দুই পরিবারকে বিয়োগান্ত করে তুলেছে। ঘাতকের গুলি আমার অল্প বয়সী ভাগ্নিকে বিধবা করেছে। হান্নানকে যে বা যারা হত্যা করেছে আমি তাঁর ফাসি চাই। তাঁর বিচার চাই। এই শোক আমাদের পক্ষে ভোলার নয়। ‘জীবনের হিসাব বহু অংকের মেলা বা না মেলার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে দেখা যায় অতীতের সে হিসাব আর মেলে না। কোথাও যেন একটা গড়মিল ধরা পড়ে। তবে হিসাব হিসেবের ছন্দেই চলুক। আর আমরা বাঁচতে শিখি জীবনের ছন্দে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী নাম : শহীদ হান্নান পেশা : ব্যবসায়ী, (তিন বন্ধু শেয়ারে বেকারীর ব্যাবসা করতেন) বেকারীর নাম : তিন আপন বেকারী (বাড্ডা) জন্ম তারিখ ও বয়স : ৩০ জনুয়ারি ১৯৯২, ৩২ বছর শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪, শনিবার, আনুমানিক ভোর: ০৪.৩০ শাহাদাত বরণের স্থান : বাড্ডায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মৃত্যুবরণ দাফন করা হয় : বড়বাড়ি, মৈশামুড়া, হাজীগঞ্জ পারিবারিক কবরস্থান, চাঁদপুর স্থায়ী ঠিকানা : বড়বাড়ি, মৈশামুড়া, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর পিতা : মো: আমিন মিয়া মাতা : মোছা: রশিদা বেগম ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : পৈতৃক বার শতক জমি রয়েছে স্ত্রী : বিবি হওয়া মুক্তা, পেশা: গৃহিণী, বয়স: ১৮ প্রস্তাবনা ১. শহীদের অনাগত সন্তানের জন্য সহায়তা করা যেতে পারে ২. শহীদের স্ত্রীকে মাসিক অথবা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ৩. শহীদের স্ত্রীকে কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে তথ্য সংগ্রহের তারিখ : ১৫-০৯-২০২৪

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  হান্নান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: পারবেজ মিয়া

মো: নাদিম

 মোঃ শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ

ওবায়দুল ইসলাম

মোঃ সোহেল

আব্দুর রহমান জিসান

মো. রফিকুল ইসলাম

আবু ইসাহাক

লিটন হাসান লালু

মো: রিয়াজ

মো: সাইফুল ইসলাম তন্ময়

আলী হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo