Image of রবিন মিয়া মিঠু

নাম: রবিন মিয়া মিঠু

জন্ম তারিখ: ১৩ মার্চ, ১৯৮২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শহীদের জীবনী

শহীদ রবিন মিয়া মিঠু ছিলেন একজন জুতার দোকান মালিক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারী। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ওবায়দপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিন মিয়া মিঠু ঢাকার দনিয়ায় পরিবারসহ বসবাস করতেন। তার জুতার দোকানের নাম ছিল মিঠু সুজ, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিল। রবিনের জীবন ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক। তার অবদান এবং সাহসিকতা তাকে আন্দোলনকারীদের মধ্যে এক বিশেষ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে হুংকার দিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রবৃন্দ। উপরুন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সাক্ষী, দেশের ক্রান্তিকালে বরাবরই ছাত্রদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। বাংলাদেশ নামক গাড়িটা যখন এমনভাবে ব্রেক ফেইল করলো আর বাংলাদেশী নামক যাত্রীরা যখন আতঙ্কিত; চারদিকে যখন কষ্ট, বেদনা, চিৎকার, আহাজারি আর নিশ্চিত ধ্বংসের সুস্পষ্ট লক্ষণ, তখন রাষ্ট্রযন্ত্রের এমন বর্বরতা তরুণ প্রতিবাদী সমাজ সচেতন রবিন মিয়ার দেখে মনে আঁচড় কাটতে পারে। কেননা সবকিছু তো তার সামনেই ঘটছে। তিনি নিজের কানেই শুনছেন মানুষের নিদারুণ আর্তনাদ; ব্যথিত মনের হাহাকার। নিজের চোখে দেখছেন কিভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে শাসক নামধারী শোষক গোষ্ঠী। দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। যেভাবে শহীদ হলেন ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে, রবিন মিয়া মিঠু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের অংশ হিসেবে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু ও সুবিচারমূলক কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। ঐদিন সকালে, আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানাচ্ছিলেন, কিন্তু ফ্যসিস্ট সরকারের লেলিয়ে দেয়া ঘাতক পুলিশ হঠাৎ করেই হামলা চালায়। রবিন মিয়া মিঠু আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। নির্মম পুলিশ কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। একপর্যায়ে রবিনের শরীরের দুটি পায়ে দুটি এবং বুকে সাতটি গুলি লাগে। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি; রক্তাক্ত হয় রাজপথ। গুরুতর আহত অবস্থায় রবিনকে বন্ধুরা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে সেদিনই তার মৃত্যু ঘটে। এই বর্বর আচরণ তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দেয় এবং বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলনে একটি গভীর ক্ষতির সৃষ্টি করে। পরিবার ও আত্মীয়দের কথা রবিন মিয়া মিঠুর মৃত্যু পরিবারের জন্য একটি গভীর শোকের বিষয়। তার মাতা পারভীন আক্তার, যিনি ৪৫ বছর বয়সী এবং গৃহিণী, তার সন্তানের মৃত্যুতে অত্যন্ত শোকাহত। তিনি বলেন, “আমার ছেলের অনুপস্থিতি আমাদের জীবনকে শূন্য করে দিয়েছে।” রবিনের স্ত্রী তুম্পা আক্তার, যিনি একজন গৃহিণী এবং অনার্সে অধ্যয়নরত, তার স্বামীর মৃত্যুতে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “রবিন ছিল আমাদের পরিবারের ভরসা। তার মৃত্যু আমাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।” রবিনের পরিবারের বড় ভাই রুবেল মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী। তিনি পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন, কিন্তু রবিনের মৃত্যু পরিবারের আর্থিক অবস্থা আরও কঠিন করে দিয়েছে। রবিনের দুই ছোট সন্তান, সোহান (৩) এবং মো: হাদিদ মিয়া (১৫ মাস), বর্তমানে তাদের মায়ের উপর নির্ভরশীল। রবিনের চাচা, একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশের বর্বর আচরণ দেখে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ তিনি নিজেও। তিনি জানান, “আমার ৩৭ বছরের পুলিশ জীবনে আমি কখনো একটি গুলিও চালাইনি। পুলিশ যে ধরনের বর্বরতা প্রদর্শন করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।” শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা রবিন মিয়া মিঠুর মৃত্যু পরিবারটির আর্থিক অবস্থাকে সংকটময় করে তুলেছে। রবিন পরিবারের অন্যতম উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, যিনি তার জুতা কারখানা পরিচালনা করতেন। তার মৃত্যুর পর, পরিবারটি বড় ভাই রুবেলের প্রবাসী আয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তার পরিবারে দুটি ছোট সন্তান রয়েছে, যা তাদের দৈনন্দিন খরচ এবং শিক্ষাগত খরচ মেটানো আরও কঠিন করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে সহায়তার প্রয়োজন। শহীদ সম্পর্কে বিশেষ তথ্য রবিন মিয়া মিঠু তার সাহসিকতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি নিয়মিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন এবং তার নেতৃত্ব ও উৎসাহের জন্য প্রশংসিত ছিলেন। তার চাচা, একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশের বর্বরতা দেখে গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন। তিনি জানান, পুলিশের এমন আচরণ তার দীর্ঘ পুলিশ জীবনে কখনো দেখেননি। রবিনের মৃত্যুর মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হারিয়েছে। শহীদ থেকে প্রেরণা রবিন মিয়া মিঠুর জীবন ও মৃত্যু আমাদের সকলকে প্রেরণা দেয়। তার সাহসিকতা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি তার অবিচল অঙ্গীকার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ তার অনুকরণীয় চরিত্রের প্রমাণ। তার জীবন ও মৃত্যু আন্দোলনকারীদের মধ্যে একতা এবং শক্তি বাড়িয়ে তুলেছে। রবিনের সাহস ও আত্মত্যাগ আগামী দিনের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করার উদ্দীপনা জোগাবে। শহীদ রবিন মিয়া মিঠু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের এক শক্তিশালী এবং সাহসী নেতা ছিলেন। তার জীবন এবং মৃত্যু আমাদের সবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করেছে। তার পরিবার এবং সমাজকে সহায়তা প্রদান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। রবিনের সংগ্রাম এবং ত্যাগ আমাদের ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা প্রদান করে। প্রস্তাবনা: প্রস্তাবনা-১: পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান করা। প্রস্তাবনা-২: শহীদের স্ত্রী ও সন্তানদের যথাযথ সহযোগিতা করা। প্রস্তাবনা-৩: জুতার কারখানা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদ সম্পর্কে তথ্যাবলি নাম : রবিন মিয়া মিঠু পেশা : ব্যবসায়ী জম্মা : ১৩/০৩/১৯৯৫ ঠিকানা : গ্রাম : ওবায়দপুর, ওয়াহেদপুর, ইউনিয়ন : সুবিলজেলা, থানা: দেবিদ্বার, জেলা: কুমিল্লা পিতা : ইদ্রীস মিয়া, মৃত মাতা : পারভীন আকতার, পেশা : গৃহিণী, বয়স: ৪৫ ঘটনার স্থান : যাত্রাবাড়ী থানার সামনে আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : ০৫/০৮/২০২৪, সময়: ১০.৩০ টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ০৫/০৮/২০২৪, সময়: ১০.৩০ টা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of রবিন মিয়া মিঠু
Image of রবিন মিয়া মিঠু
Image of রবিন মিয়া মিঠু
Image of রবিন মিয়া মিঠু

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আবদুল কাদির

নাঈমা সুলতানা

মো: হাসান

মো: ইমরান

মো: ফয়সাল সরকার

ইউনুছ আলী শাওন

মো: পারভেজ

মো: ইফাত হাসান খন্দকার

মো: আবু বকর ছিদ্দিক

মো: ফারুক

মো: আবুল হোসেন মিজি

মোহাম্মদ সজিব

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo